কর নির্ধারণ পদ্ধতি ও রিটার্নের প্রকারভেদ
পূর্বে স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের রিটার্ন দাখিলের জন্য দু’টি পদ্ধতি প্রচলিত ছিলো- সাধারণ পদ্ধতি ও সার্বজনীন স্বনির্ধারণী পদ্ধতি। বর্তমানে স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের রিটার্ন দাখিলের জন্য কেবল স্বনির্ধারণী পদ্ধতি রয়েছে। অন্য কোনোভাবে রিটার্ন দাখিলের সুযোগ নেই।
https://etaxnbr.gov.bd ওয়েবসাইট ব্যবহার করে যেকোনো স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।
স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের রিটার্ন দাখিলের জন্য দু’টি রিটার্ন রয়েছে, যথা:
অ। আইটি ঘ (২০২৩)
আ। আইটি-১১গ (২০২৩)
তবে, সকল শ্রেণির করদাতা আয়কর বিধিমালা, ১৯৮৪ এর অধীন প্রচলিত রিটার্নে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনয়নপূর্বক রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। যেমন, ব্যক্তি করদাতার জন্য রিটার্ন- আইটি ১১গ, আইটি ১১গ ২০১৬ কোম্পানি এর জন্য রিটার্ন- আইটি ১১ঘ ইত্যাদি।
রিটার্ন– আইটি ঘ (২০২৩)
আইটি ঘ (২০২৩) একটি এক পাতার রিটার্ন। এটি সবচেয়ে সহজ ও সংক্ষিপ্ত রিটার্ন। যদি কোনো করদাতা নিম্নবর্ণিত সকল মানদণ্ড পূরণ করেন তবে তিনি এক পাতার আইটি ঘ (২০২৩) রিটার্নটি ব্যবহারের যোগ্য হবেন, যথা:-
ক্রমিক নং | শর্তাবলি |
১। | করযোগ্য আয়ের পরিমাণ ৫,০০,০০০ টাকার অধিক নয় |
২। | মোট পরিসম্পদের পরিমাণ ৫০,০০,০০০ টাকার অধিক নয় |
৩। | কোনো মোটরযানের মালিক নন |
৪। | সিটি কর্পোরেশন এলাকায় কোনো গৃহ-সম্পত্তি বা অ্যাপার্টমেন্টের মালিক নন |
৫। | বাংলাদেশের বাহিরে কোনো পরিসম্পদের মালিক নন |
৬। | কোনো কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক নন |
এই রিটার্নে কেবল নিম্নবর্ণিত তথ্যাদি দিলেই রিটার্নটি সম্পন্ন হবে, যথা:-
১। আয়ের উৎস
২। মোট পরিসম্পদ
৩। মোট আয়
৪। আরোপযোগ্য কর
৫। কর রেয়াত
৬। প্রদেয় কর
৭। উৎসে পরিশোধিত কর
৮। রিটার্নের সাথে পরিশোধিত কর
৯। জীবনযাপন সংশ্লিষ্ট ব্যয়।
রিটার্ন– আইটি-১১গ (২০২৩)
আইটি ১১গ (২০২৩) রিটার্নটি কেবলমাত্র স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের জন্য প্রযোজ্য। এই রিটার্ন দাখিল করা হলে করদাতার কর নির্ধারণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে গণ্য হবে। এই রিটার্নের মাধ্যমে একজন করদাতা নিম্নোক্ত বিষয়াদি উপস্থাপন করবেন, যথা:-
(অ) সকল প্রকার আয়ের খাতভিত্তিক বিবরণী ও মোট আয় নির্ধারণ;
(আ) আয়কর এবং প্রত্যর্পণ নির্ধারণ;
(ই) জীবন–যাপন সম্পর্কিত সকল প্রকার ব্যয়ের বিবরণ;
(ঈ) বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের বাইরে অবস্থিত সকল পরিসম্পদের বিস্তারিত বিবরণ।
আয় কী?
আয় অর্থে নিম্নোক্ত বিষয়াদি অন্তর্ভুক্ত, যথা:-
(অ) যেকোনো উৎস হইতে উদ্ভূত আয়, প্রাপ্তি, মুনাফা বা অর্জন এবং উক্তরূপ আয়, মুনাফা বা অর্জন সংশ্লিষ্ট কোনো ক্ষতি;
(আ) আয় হিসাবে গণ্য বা বিবেচিত যেকোনো অর্থ, অথবা বাংলাদেশে উদ্ভূত, সৃষ্ট বা প্রাপ্ত যেকোনো আয় অথবা উপচিত, উদ্ভূত, সৃষ্ট বা প্রাপ্ত হিসাবে বিবেচিত যেকোনো অর্থ;
(ই) কর আরোপ করা হয় এইরূপ যেকোনো পরিমাণ অর্থ, পরিশোধ বা লেনদেন;
(ঈ) কোনো পরিসম্পদের অর্জন যা-
(ক) প্রাকৃতিক নয়;
(খ) কোনো ব্যক্তির স্বীয় সৃষ্টি নয়;
(গ) দায় বা বন্ধকের বিপরীতে অধিগ্রহণ নয়;
(ঘ) উত্তরাধিকার, উইল, অছিয়ত বা ট্রাস্টমূলে অর্জিত নয়;
(ঙ) বিনিময় বা ক্রয়মূলে অর্জিত নয়।
আয়ের খাতসমূহ কী কী?
একজন করদাতার সকল প্রকার আয়কে নিম্নবর্ণিত সাতটি খাতে বিভক্ত করা হয়েছে, যথা:-
(ক) চাকরি হইতে আয়;
(খ) ভাড়া হইতে আয়;
(গ) কৃষি হইতে আয়;
(ঘ) ব্যবসা হইতে আয়;
(ঙ) মূলধনি আয়;
(চ) আর্থিক পরিসম্পদ হইতে আয়; এবং
(ছ) অন্যান্য উৎস হইতে আয়।
মোট আয় কী?
সকল খাতের আয় যোগ করে মোট আয় নির্ধারণ করতে হবে এবং উক্তরূপ মোট আয়ের উপর প্রদেয় কর পরিগণনা করতে হবে। একজন করদাতা আইটি ১১গ (২০২৩) রিটার্নের নিম্নবর্ণিত অংশে খাতভিত্তিক আয়ের বিবরণ এবং মোট আয় নির্ধারণ করতে পারবেন, যথা:
মোট আয়ের বিবরণী | টাকার পরিমাণ | |
১ | চাকরি হইতে আয় | |
২ | ভাড়া হইতে আয় | |
৩ | কৃষি হইতে আয় | |
৪ | ব্যবসা হইতে আয় | |
৫ | মূলধনি আয় | |
৬ | আর্থিক পরিসম্পদ হইতে আয় (ব্যাংক সুদ/মুনাফা, লভ্যাংশ, সঞ্চয়পত্র মুনাফা, সিকিউরিটিজ ইত্যাদি) | |
৭ | অন্যান্য উৎস হইতে আয় (রয়্যালটি, লাইসেন্স ফি, সম্মানী, ফি, সরকার প্রদত্ত নগদ ভর্তুকি ইত্যাদি) | |
৮ | ফার্ম বা ব্যক্তিসংঘের আয়ের অংশ | |
৯ | অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান, স্ত্রী বা স্বামীর আয় (করদাতা না হইলে) | |
১০ | বিদেশে উদ্ভূত করযোগ্য আয় | |
১১ | মোট আয় (ক্রমিক ১ হইতে ১০ এর সমষ্টি) |
ফার্ম বা ব্যক্তিসংঘ হতে প্রাপ্ত আয় কি মোট আয়ের অন্তর্ভুক্ত হবে?
কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা যদি ফার্ম বা ব্যক্তিসংঘ হতে আয় প্রাপ্ত হন তবে তিনি উক্তরূপ আয় তার মোট আয়ের অন্তর্ভুক্ত করবেন এবং পরবর্তীতে তিনি নিয়মানুযায়ী গড়করণের মাধ্যমে উক্তরূপ আয়ের জন্য কর রেয়াত প্রাপ্ত হবেন।
স্বামী/স্ত্রী বা অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের আয় কি করদাতার মোট আয়ের অন্তর্ভুক্ত হবে?
যেক্ষেত্রে স্বামী/স্ত্রী বা অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান করদাতা নয় কিন্তু তাদের আয় রয়েছে সেক্ষেত্রে উক্ত আয় স্বামী/স্ত্রী যিনি করদাতা তার রিটার্নে মোট আয়ে অন্তর্ভুক্ত হবে।
আয়কর কী?
আয়কর অর্থ আয়কর আইনের অধীন আরোপযোগ্য বা পরিশোধযোগ্য যেকোনো প্রকারের কর বা সারচার্জ;
আয়কর পরিগণনার নিয়ম
প্রথমে মোট আয় নিরূপণ করতে হবে। এরপর মোট আয়ের উপর বিভিন্ন ধাপ অনুযায়ী করদায় নিরূপন করতে হবে। নিরূপিত গ্রস করদায় হতে বিনিয়োগ রেয়াত বাদ দিয়ে প্রদেয় করদায় নির্ধারণ করতে হবে। নিম্নে স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতাদের জন্য প্রযোজ্য করহার উপস্থাপন করা হলো, যথা:-
মোট আয় | হার |
(ক) প্রথম ৩,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর | শূন্য |
(খ) পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর | ৫% |
(গ) পরবর্তী ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর | ১০% |
(ঘ) পরবর্তী ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর | ১৫% |
(ঙ) পরবর্তী ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর | ২০% |
(চ) অবশিষ্ট মোট আয়ের উপর | ২৫% |
(ক) মহিলা করদাতা এবং ৬৫ বৎসর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা ৪,০০,০০০ টাকা;
(খ) তৃতীয় লিঙ্গের করদাতা এবং প্রতিবন্ধী স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা ৪,৭৫,০০০ টাকা;
(গ) গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার করমুক্ত আয়ের সীমা ৫,০০,০০০ টাকা;
(ঘ) কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতামাতা বা আইনানুগ অভিভাবকের প্রত্যেক সন্তান/পোষ্যের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ৫০,০০০ টাকা অধিক হবে; প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতা ও মাতা উভয়েই করদাতা হইলে যেকোনো একজন এই সুবিধা ভোগ করবেন।
কর রেয়াত
কর রেয়াত হচ্ছে এক ধরণের কর অব্যাহতি। কোনো করদাতার গ্রস করদায়ের বিপরীতে আইনানুযায়ী ছাড় প্রাপ্তির বিষয়টি হচ্ছে কর রেয়াত। কর রেয়াত প্রাপ্তির পূর্বশর্ত হচ্ছে করদাতার করদায় থাকতে হবে। অর্থাৎ যেক্ষেত্রে করদাতার কোনো প্রকার করদায় নেই সেক্ষেত্রে করদাতা কোনো প্রকার কর রেয়াত প্রাপ্ত হবেন না। যেক্ষেত্রে করদাতার করদায় অপেক্ষা করদাতা কর্তৃক দাবীকৃত আইনানুগ কর রেয়াতের পরিমাণ বেশি সেক্ষেত্রে নূন্যতম করদায় পরিশোধ সাপেক্ষে রেয়াতের পরিমাণ সমন্বয় হবে।
রিটার্নের নিম্নবর্ণিত অংশে কর রেয়াত দাবীপূর্বক প্রদেয় কর নির্ধারণ করতে হবে, যথা:-
১২ | মোট কর পরিগণনাযোগ্য আয়ের উপর আরোপযোগ্য আয়কর | ||
১৩ | কর রেয়াত | ||
১৪ | রেয়াত-পরবর্তী প্রদেয় করদায় (১২-১৩) | ||
১৫ | ন্যূনতম কর | ||
১৬ | প্রদেয় কর (ক্রমিক ১৪ ও ক্রমিক ১৫ এর মধ্যে যাহা অধিক) | ||
১৭ | (ক) নিট পরিসম্পদের জন্য প্রদেয় সারচার্জ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) | ||
(খ) পরিবেশ সারচার্জ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) | |||
১৮ | বিলম্ব সুদ, জরিমানা অথবা আয়কর আইনের অধীন প্রদেয় অন্য কোনো অঙ্ক (যদি থাকে) | ||
১৯ | মোট প্রদেয় কর (১৬+১৭+১৮) |
কর রেয়াতযোগ্য বিনিয়োগের সারণী
রিটার্নে প্রদর্শনের নিমিত্ত বিনিয়োগের সারণী নিম্নরূপ:
১ | বাংলাদেশে পরিশোধিত জীবন বিমা পলিসির প্রিমিয়াম বা চুক্তিভিত্তিক “Deffered Annuity” | |
২ | ডিপোজিট পেনশন/ মাসিক সঞ্চয় স্কিমে প্রদত্ত চাঁদা (অনুমোদনযোগ্য সীমার অতিরিক্ত নহে) | |
৩ | সরকারী সিকিউরিটিজ, ইউনিট সার্টিফিকেট, মিউচুয়াল ফান্ড, ইটিএফ অথবা যৌথ বিনিয়োগ স্কিম ইউনিট সার্টিফিকেটে বিনিয়োগ | |
৪ | অনুমোদিত স্টক এক্সচেঞ্জের সহিত তালিকাভুক্ত কোনো সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ | |
৫ | Provident Fund Act, 1925 এর বিধানাবলি প্রযোজ্য এইরূপ যেকোনো তহবিলে করদাতার চাঁদা | |
৬ | করদাতা ও তাহার নিয়োগকর্তা কর্তৃক অনুমোদিত ভবিষ্য তহবিলে প্রদত্ত চাঁদা | |
৭ | অনুমোদিত বার্ধক্য তহবিলে প্রদত্ত চাঁদা | |
৮ | কল্যাণ তহবিলে/গোষ্ঠী বিমা তহবিলে প্রদত্ত চাঁদা | |
৯ | যাকাত তহবিলে প্রদত্ত চাঁদা | |
১০ | অন্যান্য, যদি থাকে (বিবরণ দিন) | |
১১ | মোট বিনিয়োগ (ক্রমিক ১ হইতে ক্রমিক ১০ পর্যন্ত যোগফল) | |
১২ | কর রেয়াতের পরিমাণ |
আয়কর কীভাবে পরিশোধ করতে হবে?
এ–চালানের মাধ্যমে কর পরিশোধ করতে হবে। একজন করদাতা যে কর অঞ্চলের অধীন সে কর অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত কোডে করদাতাকে এ–চালানের মাধ্যেমে কর পরিশোধ করতে হবে। এছাড়াও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে করদাতাকে আইনানুযায়ী উৎসে কর পরিশোধ করতে হবে।
কর প্রত্যর্পণ কী?
কোনো করবর্ষে করদাতা কর্তৃক পরিশোধিত করের পরিমাণ তার প্রদেয় কর অপেক্ষা অতিরিক্ত হলে করদাতা রাষ্ট্রের নিকট হতে উক্তরূপ পরিশোধিত অতিরিক্ত কর ফেরত দাবী করতে পারবেন। এরূপ পরিশোধিত অতিরিক্ত কর ফেরতের দাবী কর প্রত্যর্পণ নামে অভিহিত।
করদাতা কর্তৃক দাবীকৃত প্রত্যর্পণযোগ্য কর উপকর কমিশনার রিটার্ন প্রসেসপূর্বক চূড়ান্ত করবেন। চূড়ান্তভাবে প্রত্যর্পণযোগ্য কর করদাতার অনুকূলে ফেরত প্রদান করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে অথবা করদাতার চাহিদা মোতাবেক পরবর্তী করবর্ষে উদ্ভূত করদায়ের সাথে সমন্বয় করার বিধান রয়েছে।
জীবনযাপন সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের বিবরণী (আইটি-১০ বিবি (২০২৩))
করদাতাকে রিটার্ন আইটি ১১গ (২০২৩) এ জীবনযাপন সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের বিবরণী দাখিল করতে হয়। উক্ত বিবরণীতে করদাতার খাতভিত্তিক ব্যয়াদি উল্লেখ করতে হবে এবং যেক্ষেত্রে এ ধরণের ব্যয়ের কোনো অংশ পরিবারের অন্য কেউ বহন করে তা মন্তব্যের কলামে উল্লেখ করা যেতে পারে। রিটার্নের জীবনযাপন সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের বিবরণী নিম্নরূপ:
ক্রমিক | ব্যয়ের বিবরণ (বার্ষিক) | পরিমাণ | মন্তব্য |
১ | ব্যক্তিগত ও পরিবারের ভরণপোষণ খরচ
|
||
২ | আবাসন সংক্রান্ত ব্যয়
|
||
৩ | ব্যক্তিগত যানবাহন সংক্রান্ত ব্যয়
|
||
৪ | ইউটিলিটি সংক্রান্ত ব্যয় (বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস, পানি, টেলিফোন, মোবাইল, ইন্টারনেট ইত্যাদি) | ||
৫ | শিক্ষা ব্যয়
|
||
৬ | নিজ খরচে দেশে ও বিদেশ ভ্রমণ, অবকাশ ইত্যাদি সংক্রান্ত ব্যয়
|
||
৭ | উৎসব ও অন্যান্য বিশেষ ব্যয়
|
||
৮ | উৎসে কর্তিত/সংগৃহীত কর (সঞ্চয়পত্রের মুনাফার উপর কর্তিত করসহ) ও বিগত বৎসরে রিটার্নের ভিত্তিতে প্রদত্ত আয়কর ও সারচার্জ | ||
৯ | প্রাতিষ্ঠানিক ও অন্যান্য উৎস হতে গৃহিত ব্যক্তিগত ঋণের সুদ পরিশোধ
|
||
মোট |
পরিসম্পদ, দায় ও ব্যয় বিবরণী (আইটি ১০বি (২০২৩))
রিটার্ন আইটি ১১গ (২০২৩) এর আইটি ১০বি (২০২৩) অংশে করদাতার পরিসম্পদ, দায় ও ব্যয় বিবরণী রয়েছে। যে সকল স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা নিম্নবর্ণিত শর্তাদি পূরণ করবেন তাদেরকে এই পরিসম্পদ, দায় ও ব্যয় বিবরণী বাধ্যতামূলকভাবে দাখিল করতে হবে, যথা:-
ক। করদাতা যদি গণকর্মচারী হন;
খ। করদাতার দেশে ও বিদেশে অবস্থিত মোট পরিসম্পদের মূল্য ৫০,০০,০০০ টাকার অধিক হলে;
গ। করদাতার মোট পরিসম্পদের মূল্য ৫০,০০,০০০ টাকার কম অথচ আয়বর্ষের কোনো সময় মোটরযানের মালিক ছিলেন অথবা সিটি কর্পোরেশন এলাকার মধ্যে গৃহসম্পত্তি বা অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ করেছেন অথবা বিদেশে কোনো পরিসম্পদের মালিক হয়েছেন অথবা কোনো কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক হয়েছেন;
ঘ। করদাতা যদি অনিবাসী বাংলাদেশী স্বাভাবিক ব্যক্তি হন অথবা বাংলাদেশী নন এমন স্বাভাবিক ব্যক্তি হন তাহলে তিনি শুধুমাত্র বাংলাদেশে অবস্থিত সকল পরিসম্পদের তথ্য প্রদান করবেন।
আইটি ১০বি (২০২৩) এ নিম্নরূপে মোট পরিসম্পদ পরিগণনা করতে হবে, যথা:-
১। | অর্জিত তহবিলসমূহ – | |||||
(ক) | রিটার্নে প্রদর্শিত মোট আয় (মোট আয়ের বিবরণীর ১১নং ক্রমিক অনুযায়ী) | টাকা | … | |||
(খ) | কর অব্যাহতি প্রাপ্ত আয় | টাকা | … | |||
(গ) | দান গ্রহণ/অন্যান্য প্রাপ্তি | টাকা | … | |||
মোট অর্জিত তহবিল | টাকা | … | ||||
২। | বিগত আয়বর্ষের শেষ তারিখের নীট সম্পদ | টাকা | … | |||
৩। | অর্জিত তহবিল ও বিগত আয়বর্ষের শেষ তারিখের নীট সম্পদের যোগফল (১+২) | টাকা | … | |||
৪। | (ক) | জীবনযাপন সংশ্লিষ্ট ব্যয়: [ ফরম নং আইটি-১০বিবি অনুযায়ী মোট খরচ] | টাকা | … | ||
(খ) | আইটি ১০বিবি তে উল্লিখিত হয় নাই এইরূপ দান/ব্যয়/ক্ষতি | টাকা | … | |||
মোট ব্যয় ও ক্ষতি | টাকা | … | ||||
৫। | এই আয়বর্ষের শেষ তারিখের নীট সম্পদ (৩-৪) | টাকা | … | |||
৬। | ব্যক্তিগত দায়সমূহ (ব্যবসায় বহির্ভূত) | |||||
(ক) | প্রাতিষ্ঠানিক দায় | টাকা | … | |||
(খ) | অপ্রাতিষ্ঠানিক দায় | টাকা | … | |||
(গ) | অন্যান্য দায় | টাকা | … | |||
ব্যবসায় বহির্ভূত মোট দায় | টাকা | … | ||||
৭। | মোট পরিসম্পদ (ক্রমিক ৫ ও ক্রমিক ৬ এর যোগফল) | টাকা | … |
মোট পরিসম্পদের অর্থ হচ্ছে করদাতার বাংলাদেশের ভিতরে এবং বাংলাদেশের বাহিরে অবস্থিত মোট পরিসম্পদ। করদাতাকে রিটার্নের নিম্নবর্ণিত ছকে মোট পরিসম্পদের বর্ণনা দিতে হবে, যথা:-
৮। | বাংলাদেশে অবস্থিত পরিসম্পদের খাতভিত্তিক বিবরণ (প্রযোজ্য সকল ক্ষেত্রে পৃথক পৃথক বিবরণী সংযুক্ত করুন) | ||||||
(ক) | ব্যবসার মোট পরিসম্পদ | টাকা | … | ||||
(বিয়োগ) ব্যবসায়িক দায় (প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক) | টাকা | … | |||||
ব্যবসার মূলধন (পরিসম্পদ ও দায়ের পার্থক্য) | টাকা | … | |||||
(খ) | পরিচালক হিসাবে লিমিটেড কোম্পানিতে শেয়ার বিনিয়োগ | টাকা | … | ||||
(গ) | অংশীদারী ফার্মের মূলধনের জের | টাকা | … | ||||
(ঘ) | অ-কৃষি সম্পত্তি/জমি/গৃহ সম্পত্তি (আইন সম্মত ব্যয়সহ ক্রয়মূল্য/অর্জনমূল্য/ নির্মাণ ব্যয়/বিনিয়োগ) | টাকা | … | ||||
অকৃষি সম্পত্তির অবস্থান ও বিবরণ উল্লেখ করুন (প্রয়োজনে পৃথক কাগজে) | |||||||
(ঙ) | কৃষি সম্পত্তি (আইন সম্মত ব্যয়সহ ক্রয়মূল্য/অর্জনমূল্য) | টাকা | … | ||||
মোট জমির পরিমাণ ও জমির অবস্থান উল্লেখ করুন (প্রয়োজনে পৃথক কাগজে) | |||||||
(চ) | আর্থিক পরিসম্পদসমূহ | ||||||
(অ) | শেয়ার/ডিবেঞ্চার/বন্ড/সিকিউরিজ /ইউনিট সার্টিফিকেট ইত্যাদি | টাকা | … | ||||
(আ) | সঞ্চয়পত্র/ডিপোজিট পেনশন স্কিম | টাকা | … | ||||
(ই) | ঋণ প্রদান (ঋণ গ্রহণকারীর নাম ও এনআইডি উল্লেখ করুন) | টাকা | … | ||||
(ঈ) | সঞ্চয়ী/মেয়াদি আমানত | টাকা | … | ||||
(উ) | প্রভিডেন্ট ফান্ড বা অন্যান্য ফান্ড (যদি থাকে) | টাকা | … | ||||
(ঊ) | অন্যান্য বিনিয়োগ | টাকা | … | ||||
মোট আর্থিক পরিসম্পদ | টাকা | … | |||||
(ছ) | মোটর যান (রেজিস্ট্রেশন খরচসহ ক্রয়মূল্য) | টাকা | … | ||||
মোটর যানের প্রকৃতি ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর উল্লেখ করুন | |||||||
(জ) | অলংকারাদি (পরিমাণ উল্লেখ করুন) | টাকা | … | ||||
(ঝ) | আসবাবপত্র ও ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী | টাকা | …
|
||||
(ঞ) | অন্যান্য পরিসম্পদ (ক্রমিক (ট) এ বর্ণিত সম্পদ ব্যতীত) (বিবরণ দিন) | টাকা | … | ||||
(ট) | ব্যবসা বহির্ভূত নগদ অর্থ ও তহবিল | ||||||
(অ) | ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ | টাকা | … | ||||
(আ) | হাতে নগদ | টাকা | … | ||||
(ই) | অন্যান্য অর্থ | টাকা | … | ||||
মোট ব্যবসা বহির্ভূত নগদ অর্থ ও তহবিল | টাকা | … | |||||
বাংলাদেশে অবস্থিত মোট পরিসম্পদ | টাকা | … | |||||
৯। | বাংলাদেশের বাহিরে অবস্থিত পরিসম্পদ (প্রযোজ্যতা অনুসারে) | টাকা | … | ||||
১০। | বাংলাদেশে অবস্থিত ও বাংলাদেশের বাহিরে অবস্থিত মোট পরিসম্পদ (৮+৯) |
টাকা |
… |
প্রতিপাদন
করদাতা কর্তৃক দাখিলকৃত রিটার্নের প্রতিটি অংশ করদাতা কর্তৃক প্রতিপাদিত ও স্বাক্ষরিত হতে হবে।
রিটার্নের সাথে যেসব প্রমাণাদি/তথ্যাদি/দলিলাদি দাখিল করতে হবে
রিটার্নের সাথে বিভিন্ন উৎসের আয়ের সমর্থনে যে সকল প্রমাণাদি/ বিবরণ দাখিল করতে হবে তার একটি তালিকা নীচে দেয়া হলো (তালিকাটি আংশিক):
(ক) চাকরি হইতে আয়
(অ) বেতন বিবরণী;
(আ) ব্যাংক হিসাব থাকলে কিংবা ব্যাংক সুদ খাতে আয় থাকলে ব্যাংক বিবরণী বা ব্যাংক সার্টিফিকেট;
(ই) বিনিয়োগ রেয়াত দাবী থাকলে তার সমর্থনে প্রমাণাদি। যেমন, জীবন বিমার পলিসি থাকলে প্রিমিয়াম পরিশোধের প্রমাণ।
(খ) ভাড়া হইতে আয়
(অ) বাড়ী ভাড়ার সমর্থনে ভাড়ার চুক্তিনামা বা ভাড়ার রশিদের কপি, মাসভিত্তিক বাড়ী ভাড়া প্রাপ্তির বিবরণ এবং প্রাপ্ত বাড়ী ভাড়া জমা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাব বিবরণী;
(আ) পৌর কর, সিটি কর্পোরেশন কর, ভূমি রাজস্ব প্রদানের সমর্থনে রশিদের কপি;
(ই) ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে বাড়ী কেনা বা নির্মাণ করা হয়ে থাকলে ঋণের সুদের সমর্থনে ব্যাংক বিবরণী ও সার্টিফিকেট;
(ঈ) গৃহ-সম্পত্তি বিমাকৃত হলে বিমা প্রিমিয়ামের রশিদের কপি;
(উ) শূন্যতা ভাতা দাবী করলে তার সমর্থনে বিদ্যুৎ বিলের কপি;
(ঊ) অন্যান্য ভাড়ার ক্ষেত্রে ভাড়ার প্রাপ্তি ও ব্যয়ের সমর্থনে দলিলাদির কপি।
(গ) কৃষি হইতে আয়
(অ) বর্গা বা ভাগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দলিলাদির কপি;
(আ) যেক্ষেত্রে করদাতা গ্রস প্রাপ্তির ৬০ শতাংশের অধিক খরচ দাবী করেন সেক্ষেত্রে উক্তরূপ দাবীর সমর্থনে প্রয়োজনীয় দলিলাদির কপি।
(ঘ) ব্যবসা হইতে আয়
ব্যবসা বা পেশার আয়-ব্যয়ের বিবরণী (Income Statement) ও স্থিতিপত্র (Balance Sheet) এবং ব্যাংক বিবরণীসহ অন্যান্য প্রমাণকসমূহ।
(ঙ) মূলধনি আয়
(অ) স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয়/হস্তান্তর হলে তার দলিলের কপি;
(আ) উৎসে আয়কর জমা হলে তার চালানের কপি;
(ই) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার লেনদেন থেকে মুনাফা হলে এ সংক্রান্ত প্রত্যয়ন পত্র।
(চ) আর্থিক পরিসম্পদ হইতে আয়
(অ) সিকিউরিটিজ স্ক্রিপ্ট হলে তার কপি এবং স্ক্রিপ্টলেস হলে তার হিসাবের সমর্থনে বিবরণী;
(আ) সুদ আয় থাকলে সুদ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়ন পত্র;
(ই) প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ নিয়ে বন্ড বা ডিবেঞ্চার কেনা হয়ে থাকলে ঋণের সুদের সমর্থনে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সার্টিফিকেট/ব্যাংক বিবরণী বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রত্যয়ন পত্র।
(ঈ) নগদ লভ্যাংশ খাতে আয় থাকলে ব্যাংক বিবরণী, ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্টের কপি বা সার্টিফিকেট;
(উ) সঞ্চয়পত্র হতে সুদ আয় থাকলে সঞ্চয়পত্র নগদায়নের সময় বা সুদ প্রাপ্তির সময় নেয়া সার্টিফিকেটের কপি;
(ঊ) ব্যাংক সুদ আয় থাকলে ব্যাংক বিবরণী/সার্টিফিকেট।
(ছ) অন্যান্য উৎসের আয়ের খাত
আয়ের উৎসের সমর্থনে প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র।
(জ) অংশীদারী ফার্মের আয়
ফার্মের আয়-ব্যয়ের বিবরণী (Income Statement) ও স্থিতিপত্র (Balance Sheet).
আয়কর পরিশোধের প্রমাণ (উৎসে কর কর্তনসহ)
(ক) সকল প্রকার কর ও উৎসে কর অটোমেটেড চালান (এ-চালান) বা ই-পেমেন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে।
(খ) যেকোনো খাতের আয় হতে উৎসে আয়কর পরিশোধ করা হলে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষ প্রত্যেক করদাতা যাদের বিলের বিপরীতে উৎসে কর কর্তন করা হয়েছে তাদের বরাবরে ই-পেমেন্ট চালান বা ক্ষেত্রমত এ-চালানসহ প্রত্যয়নপত্র প্রদান করবেন।
সংশোধিত রিটার্ন দাখিল
রিটার্ন দাখিলের পর যদি করদাতার নিকট প্রতীয়মান হয় যে, নিম্নবর্ণিত কারণে তার প্রদেয় কর সঠিকভাবে পরিগণিত হয়নি বা সঠিক অঙ্কে পরিশোধিত হয়নি তাহলে তিনি সংশোধিত রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন, যথা:
(ক) প্রদর্শিত আয়; বা
(খ) দাবিকৃত কর অব্যাহতি বা ক্রেডিট; বা
(গ) অন্য কোনো কারণে।
এক্ষেত্রে, করদাতা সংশোধিত রিটার্ন দাখিলের কারণ সংবলিত একটি লিখিত বিবৃতি দাখিল করবেন। তবে, নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্রে সংশোধিত রিটার্ন দাখিল করা যাবে না, যথা:-
(ক) রিটার্ন দাখিল করার তারিখ হতে ১৮০ (একশত আশি) দিন শেষ হওয়ার পর;
(খ) সংশোধিত রিটার্ন প্রথমবার দাখিলের পর; বা
(গ) মূল রিটার্নটি ধারা ১৮২ এর অধীনে অডিটের জন্য নির্বাচিত হওয়ার পর।
কর দিবসের মধ্যে সংশোধিত রিটার্ন দাখিল করলে ধারা ১৭৩ অনুযায়ী কর পরিশোধ করতে হবে।
করদিবস পরবর্তীকালে সংশোধিত রিটার্ন দাখিল করলে, সংশোধিত রিটার্নে এমন কোনো কর অব্যাহতি দাবি করা যাবে না যা মূল রিটার্নে দাবি করা হয়নি এবং নতুন কোনো কর অব্যাহতি দাবি করা হলে তা বাতিলপূর্বক নিয়মিত হারে করারোপিত হবে।
রিটার্ন প্রসেস
উপকর কমিশনার কয়েকটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ত্রুটি-বিচ্যুতি চিহ্নিতকরণের লক্ষ্যে করদাতা কর্তৃক দাখিলকৃত রিটার্ন প্রসেস করেন। রিটার্ন প্রসেসের ফলশ্রুতিতে যদি দেখা যায়, করদাতা প্রদেয় অংকের চেয়ে কম বা বেশি আয়কর ও প্রযোজ্য অন্যান্য অংক পরিশোধ করেছেন, তাহলে উপকর কমিশনার করদাতাকে তা অবহিত করে এ বিষয়ে পরবর্র্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবেন।