মোট আয়ের উপর আরোপযোগ্য আয়কর
মোট আয় ও কর নির্ধারণের ধাপগুলো কী কী?
১। প্রথমে সকল খাতের আয়গুলো যোগ করে মোট আয় নির্ধারণ করতে হবে। ন্যূনতম কর প্রযোজ্য হয় এরূপ আয় এবং চূড়ান্ত করদায় প্রযোজ্য হয় এরূপ আয়ও মোট আয়ের অন্তর্ভুক্ত হবে। তবে, কর নির্ধারণের জন্য মোট আয়কে আবশ্যিকভাবে ৩ ভাগে ভাগ করতে হবে, যথা: (ক) নিয়মিত উৎসের আয় (অর্থাৎ এটি ন্যূনতম কর প্রযোজ্য হয় এরূপ আয় নয় বা চূড়ান্ত করদায় প্রযোজ্য হয় এরূপ আয়ও নয়); (খ) ন্যূনতম কর প্রযোজ্য হয় এরূপ আয় (নিচের টেবিল দেখুন); (গ) চূড়ান্ত করদায় প্রযোজ্য হয় এরূপ আয় (নিচের টেবিল দেখুন)।
২। ন্যূনতম কর প্রযোজ্য হয় এরূপ আয় এবং চূড়ান্ত করদায় প্রযোজ্য হয় এরূপ আয় মোট আয়ের অন্তর্ভুক্ত থাকলে তা আলাদা করে হিসাব করতে হবে। এক্ষেত্রে, প্রথমে ন্যূনতম কর প্রযোজ্য হয় এরূপ আয় এবং/বা চূড়ান্ত করদায় প্রযোজ্য হয় এরূপ আয় ব্যতীত অন্যান্য নিয়মিত উৎসের আয়ের উপর সাধারণভাবে প্রযোজ্য করহার প্রয়োগ করে কর নিরুপন করতে হবে।
৩। অতঃপর নিয়মিত করহার প্রযোজ্য হয় এরূপ আয় এবং ন্যূনতম কর প্রযোজ্য হয় এরূপ আয়ের সমষ্টির উপর প্রথমে নিয়মিত হারে করদায় নিরুপণ করতে হবে। এরূপে নিরুপিত করের অংক এবং নিয়মিত উৎসের আয়ের উপর নিরুপিত করের অংকের পার্থক্য উৎসে কর্তিত/প্রযোজ্য কর অপেক্ষা কম হলে উৎসে কর্তিত/প্রযোজ্য কর ন্যূনতম কর হিসেবে গণ্য হবে।
৪। নিয়মিত উৎসের আয়ের উপর নিরুপিত কর এবং ন্যূনতম কর ও চূড়ান্ত কর যোগ করে গ্রস করদায় নির্ধারণ করতে হবে।
৫। কেবল নিয়মিত উৎসের আয়ের বিপরীতে নিরুপিত করের বিপরীতে বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত দাবী করা যাবে। ন্যূনতম কর প্রযোজ্য হয় এরূপ আয় এবং চূড়ান্ত করদায় প্রযোজ্য হয় এরূপ আয়ের বিপরীতে সৃষ্ট করদায়ের বিপরীতে বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত দাবী করা যাবে না।
৬। ফার্ম বা ব্যক্তিসংঘের আয়ের বিপরীতে কর রেয়াত দাবীর পূর্বে বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত দাবী করতে হবে।
ন্যূনতম কর প্রযোজ্য হয় এরূপ উৎসের আয়
ধারা | ন্যূনতম কর প্রযোজ্য হয় এরূপ আয়ের উৎস | ধারা | ন্যূনতম কর প্রযোজ্য হয় এরূপ আয়ের উৎস |
৮৮ | অংশগ্রহণ তহবিল, কল্যাণ তহবিল ও শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলে প্রদত্ত অর্থ হইতে উৎসে কর্তন | ১১৭ | লভ্যাংশ হইতে কর কর্তন |
৮৯ | ঠিকাদার, সরবরাহকারী ইত্যাদিকে প্রদত্ত অর্থ হইতে কর কর্তন | ১১৮ | লটারি, ইত্যাদি হতে প্রাপ্ত আয় হইতে কর কর্তন |
৯০ | সেবার ক্ষেত্রে পরিশোধ হইতে কর্তন | ১২০ | আমদানিকারকদের নিকট হইতে কর সংগ্রহ |
৯১ | স্পর্শাতীত সম্পত্তির জন্য পরিশোধিত অর্থ হইতে কর্তন | ১২১ | জনশক্তি রপ্তানি হইতে কর সংগ্রহ |
৯২ | প্রচার মাধ্যমের বিজ্ঞাপন আয় হইতে কর কর্তন | ১২২ | ক্লিয়ারিং ও ফরওয়ার্ডিং এজেন্টদের নিকট হইতে কর সংগ্রহ |
৯৪ | কমিশন, ডিসকাউন্ট, ফি, ইত্যাদি হতে কর্তন বা উৎসে কর সংগ্রহ | ১২৩ | রপ্তানি আয় হইতে কর সংগ্রহ |
৯৫ | ট্রাভেল এজেন্টের নিকট হইতে কর সংগ্রহ | ১২৪ | কোন সেবা, রেভিনিউ শেয়ারিং, ইত্যাদি বাবদ বিদেশ হইতে প্রেরিত আয় হইতে কর কর্তন |
১০০ | বীমার কমিশনের অর্থ হইতে কর্তন | ১২৫ | সম্পত্তি হস্তান্তর, ইত্যাদি হইতে কর সংগ্রহ (চূড়ান্ত) |
১০১ | সাধারণ বীমা কোম্পানি জরিপকারীদের ফি, ইত্যাদি হইতে কর কর্তন | ১২৬ | রিয়েল এস্টেট বা ভূমি উন্নয়নকারীদের নিকট হইতে কর সংগ্রহ |
১০২ | সঞ্চয়ী আমানত ও স্থায়ী আমানত, ইত্যাদি হইতে কর কর্তন | ১২৭ | সরকারি স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি, কার্টিজ পেপার বাবদ পরিশধিত কমিশন হইতে কর সংগ্রহ |
১০৫ | সঞ্চয় পত্রের মুনাফা হইতে কর কর্তন (চূড়ান্ত) | ১২৮ | সম্পত্তির ইজারা হইতে কর সংগ্রহ |
১০৬ | সিকিউরিটিজের সুদ হইতে উৎসে কর কর্তন | ১২৯ | সিগারেট উৎপাদনকারীদের হইতে কর সংগ্রহ |
১০৮ | আন্তর্জাতিক ফোন কলের জন্য প্রাপ্ত অর্থ হইতে কর কর্তন | ১৩২ | কোন নিবাসীর জাহাজ ব্যবসা হইতে কর সংগ্রহ |
১১০ | কনভেনশন হল, কনফারেন্স সেন্টার, ইত্যাদি হইতে সেবা প্রদানের জন্য কর কর্তন | ১৩৩ | প্রকাশ্য নিলামের বিক্রি হইতে কর সংগ্রহ |
১১১ | সম্পত্তি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ হইতে উৎসে কর কর্তন (চূড়ান্ত) | ১৩৪ | শেয়ার হস্তান্তর হইতে কর সংগ্রহ |
১১২ | নগদ রপ্তানি ভর্তুকির উপর উৎসে কর কর্তন (চূড়ান্ত) | ১৩৫ | সিকিউরিটিজ হস্তান্তর হইতে কর সংগ্রহ |
১১৩ | পরিবহন মাশুল ফরওয়ার্ড এজেন্সি কমিশন হইতে কর কর্তন | ১৩৬ | স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার স্থানান্তর হইতে কর সংগ্রহ |
১১৪ | বিদ্যুৎ ক্রয়ের বিপরীতে কর কর্তন | ১৩৭ | স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের নিকট হইতে কর সংগ্রহ |
১১৫ | রিয়েল এস্টেট উন্নয়নকারীর (ডেভেলপার) নিকট হতে ভূমির মালিক কর্তৃক প্রাপ্ত আয় হইতে কর কর্তন (চূড়ান্ত) | ১৩৮ | বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত মোটরযান হইতে কর সংগ্রহ |
১১৬ | বিদেশী ক্রেতার এজেন্টকে প্রদত্ত কমিশন বা পারিশ্রমিক হতে কর কর্তন | ১৩৯ | নৌযান পরিচালনা হইতে কর সংগ্রহ |
সাধারণভাবে, মোট আয়ের উপর করহারের তফসিল অনুযায়ী করহার প্রয়োগ করে একজন করদাতার মোট আয়ের উপর আরোপযোগ্য আয়করের পরিমাণ নিরূপণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪-২০২৫ করবর্ষে একজন পুরুষ করদাতার মোট আয়ের পরিমাণ ৫০,০০,০০০ টাকা হলে তার মোট আয়ের উপর আরোপযোগ্য আয়করের পরিমাণ হবে নিম্নরূপ:
মোট আয় | করহার | করের পরিমাণ (ট) |
প্রথম ৩,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর | শূন্য | শূন্য |
পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর | ৫% | ৫,০০০ |
পরবর্তী ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর | ১০% | ৪০,০০০ |
পরবর্তী ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর | ১৫% | ৭৫,০০০ |
পরবর্তী ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর | ২০% | ১,০০,০০০ |
অবশিষ্ট ৩১,৫০,০০০ টাকার উপর | ২৫% | ৭,৮৭,৫০০ |
৫০,০০,০০০ টাকার উপর মোট আয়করের পরিমাণ | ১০,০৭,৫০০ |
করদাতা যদি মহিলা করদাতা হন অথবা ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতা হন তাহলে মোট আয়ের উপর আরোপযোগ্য আয়করের পরিমাণ হবে নিম্নরূপ:
মোট আয় | করহার | করের পরিমাণ (ট) |
প্রথম ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর | শূন্য | শূন্য |
পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর | ৫% | ৫,০০০ |
পরবর্তী ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর | ১০% | ৪০,০০০ |
পরবর্তী ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর | ১৫% | ৭৫,০০০ |
পরবর্তী ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর | ২০% | ১,০০,০০০ |
অবশিষ্ট ৩১,০০,০০০ টাকার উপর | ২৫% | ৭,৭৫,০০০ |
৫০,০০,০০০ টাকার উপর মোট আয়করের পরিমাণ | ৯,৯৫,০০০ |
তৃতীয় লিঙ্গ বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি করদাতার ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা ৪,৭৫,০০০ টাকা এবং গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা হবে ৫,০০,০০০ টাকা। ফলে এসব করদাতার ক্ষেত্রে মোট আয়ের উপর আরোপযোগ্য আয়করের পরিমাণ কিছুটা কম হবে। প্রতিবন্ধী সন্তান বা পোষ্য রয়েছে এমন পিতামাতা বা আইনানুগ অভিভাবকের ক্ষেত্রে করমুক্ত সীমা প্রত্যেক সন্তান বা পোষ্যের জন্য ৫০,০০০ টাকা বেশি হবে। ফলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতা ও মাতা উভয়েই করদাতা হলে যেকোনো একজন এ সুবিধা পাবেন। করদাতা কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতামাতা বা আইনানুগ অভিভাবক হলে মোট আয়ের উপর আরোপযোগ্য আয়কর কিভাবে নিরূপিত হবে তার উদাহরণ নিম্নে দেয়া হলো:
উদাহরণ–৯
ধরা যাক, জনাব সাব্বির চৌধুরী এবং তার স্ত্রী মিজ্ অর্পা চৌধুরী দু’জনেই করদাতা এবং তাদের দুইজন সন্তান প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংজ্ঞা অনুযায়ী প্রতিবন্ধী হিসেবে বিবেচিত। ৩০ জুন ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত আয়বর্ষে জনাব সাব্বির চৌধুরীর মোট আয় ৫,০০,০০০ টাকা এবং মিজ্ অর্পা চৌধুরীর মোট আয় ৬,০০,০০০ টাকা।
যদি জনাব সাব্বির চৌধুরী প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পিতা হিসেবে প্রত্যেক প্রতিবন্ধী সন্তানের জন্য ৫০,০০০ টাকা অতিরিক্ত করমুক্ত সীমার সুবিধা গ্রহণ করেন তাহলে তার মোট আয়ের উপর ২০২৪-২০২৫ করবর্ষে আরোপযোগ্য আয়করের পরিমাণ হবে নিম্নরূপঃ
মোট আয় | ৫,০০,০০০ |
বাদ: করমুক্ত সীমা (৩,৫০,০০০ + ৫০,০০০+ ৫০,০০০) | ৪,৫০,০০০ |
অবশিষ্ট | ৫০,০০০ |
মোট আয়ের উপর প্রযোজ্য আয়কর (৫০,০০০ × ৫%) | ২,৫০০ |
আর যদি মিজ্ অর্পা চৌধুরী প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মাতা হিসেবে প্রত্যেক প্রতিবন্ধী সন্তানের জন্য ৫০,০০০ টাকার অতিরিক্ত করমুক্ত সীমার সুবিধা গ্রহণ করেন তাহলে তার মোট আয়ের উপর আরোপযোগ্য আয়করের পরিমাণ হবে নিম্নরূপ:
মোট আয় | ৬,০০,০০০ |
বাদ: করমুক্ত সীমা (৪,০০,০০০ + ৫০,০০০+ ৫০,০০০) | ৫,০০,০০০ |
অবশিষ্ট | ১,০০,০০০ |
মোট আয়ের উপর প্রযোজ্য আয়কর (১,০০,০০০ × ৫%) | ৫,০০০ |
জনাব সাব্বির চৌধুরী এবং মিজ্ অর্পা চৌধুরীর মধ্যে যে কোনো একজন অতিরিক্ত করমুক্ত সীমার সুবিধা প্রাপ্য হবেন।
করদাতার অবস্থানভেদে ন্যূনতম কর
করমুক্ত সীমার উর্ধ্বের আয়ের ক্ষেত্রে প্রদেয় ন্যূনতম আয়করের পরিমাণ এলাকাভেদে নিম্নরূপ:
এলাকার বিবরণ | ন্যূনতম করের হার (ট) |
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবস্থিত করদাতা | ৫,০০০ |
অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবস্থিত করদাতা | ৪,০০০ |
সিটি কর্পোরেশন ব্যতীত অন্যান্য এলাকায় অবস্থিত করদাতা | ৩,০০০ |
- একজন করদাতার আয় যে কোনো স্থানেই অর্জিত হোক না কেন তিনি যেখানে অবস্থান করবেন তার সে অবস্থানের ভিত্তিতেই ন্যূনতম করের হার নির্ধারিত হবে।
- কোনো করদাতা একই আয়বর্ষে একাধিক স্থানে অবস্থান করলে যে স্থানে তিনি সর্বাধিককাল অবস্থান করেছেন সে অবস্থানস্থলের জন্য প্রযোজ্য ন্যূনতম করহার তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
- ব্যবসা আয়ের ক্ষেত্রে ব্যবসা পরিচালনার মুখ্য স্থানই ন্যূনতম করের জন্য একজন করদাতার অবস্থানস্থল হিসেবে বিবেচিত হবে।
- একজন চাকরিজীবী করদাতা আয়বর্ষে একাধিক স্থানে কর্মরত থাকলে যে স্থানে তিনি অধিককাল কর্মরত ছিলেন ন্যূনতম করের জন্য সে স্থানই তার অবস্থানস্থল বলে বিবেচিত হবে।
- করদাতা অনিবাসী হলে বাংলাদেশে তিনি যে ঠিকানা ব্যবহার করেন সে ঠিকানাই তার অবস্থান স্থল হিসেবে বিবেচিত হবে।
- করমুক্ত সীমার উর্ধ্বে আয় আছে এমন করদাতার প্রদেয় আয়করের পরিমাণ তার জন্য প্রযোজ্য ন্যূনতম আয়করের পরিমাণ অপেক্ষা কম হলে, অথবা বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত বিবেচনার পর প্রদেয় আয়করের পরিমাণ প্রযোজ্য ন্যূনতম আয়করের কম, শূন্য বা ঋণাত্মক হলেও করদাতাকে তার জন্য প্রযোজ্য ন্যূনতম আয়কর পরিশোধ করতে হবে।
বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত
(আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ৭৮ অনুযায়ী)
নির্দিষ্ট কয়েকটি খাতে করদাতার বিনিয়োগ থাকলে করদাতা বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত পান। মোট আয়ের উপর আরোপযোগ্য আয়করের অংক থেকে কর রেয়াতের অংক বাদ দিলে প্রদেয় করের অংক পাওয়া যায়।
আয়কর আইনের বিধান সাপেক্ষে এবং ষষ্ঠ তফসিল এর অংশ ৩ এ নির্ধারিত সীমা, শর্তাবলি এবং যোগ্যতা সাপেক্ষে কোনো বিনিয়োগ করা হলে, কোনো করবর্ষে মোট আয়ের উপর প্রযোজ্য কর হতে নিবাসী স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা ও অনিবাসী বাংলাদেশি স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা নিম্নবর্ণিতভাবে কর রেয়াত প্রাপ্য হবেন-
(ক) ০.০৩ × ‘ক’; বা
(খ) ০.১৫ × ‘খ’; বা
(গ) ১০ (দশ) লক্ষ টাকা,
এই তিনটির মধ্যে যা কম,
এখানে,
‘ক’ = কর অব্যাহতি প্রাপ্ত আয়, হ্রাসকৃত করহার প্রযোজ্য এরূপ আয় এবং ন্যূনতম কর প্রযোজ্য এরূপ আয় বাদ দিয়ে পরিগণিত মোট আয়, এবং
‘খ’ = কোনো আয়বর্ষে ষষ্ঠ তফসিল এর অংশ ৩ অনুসারে করদাতার মোট বিনিয়োগ ও ব্যয়ের পরিমাণ।
কর রেয়াতযোগ্য বিনিয়োগের খাত
একজন করদাতার বিনিয়োগের উল্লেখযোগ্য খাতগুলোর তালিকা নীচে দেয়া হলো:
▪জীবন বিমার প্রিমিয়াম;
▪ সরকারি কর্মকর্তার প্রভিডেন্ট ফান্ডে চাঁদা;
▪ স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে নিয়োগকর্তা ও কর্মকর্তার চাঁদা;
▪ কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠী বিমা তহবিলে চাঁদা;
▪ সুপার এনুয়েশন ফান্ডে প্রদত্ত চাঁদা;
▪ যে কোনো তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিপোজিট পেনশন স্কীমে বার্ষিক সর্বোচ্চ ১,২০,০০০ টাকা বিনিয়োগ;
▪ যেকোনো সিকিউরিটিজ ক্রয়ে ৫,০০,০০০ টাকার বিনিয়োগ;
▪ বাংলাদেশের স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, স্টক, মিউচ্যুয়াল ফান্ড বা ডিবেঞ্চারে বিনিয়োগ;
▪ জাতির পিতার স্মৃতি রক্ষার্থে নিয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে অনুদান;
▪ যাকাত তহবিলে দান;
▪ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত কোনো দাতব্য হাসপাতালে দান;
▪ প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানে দান;
▪ মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে প্রদত্ত দান;
▪ আহসানিয়া ক্যান্সার হাসপাতালে দান;
▪ ICDDRB তে প্রদত্ত দান;
▪ CRP, সাভার এ প্রদত্ত দান;
▪ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত জনকল্যাণমূলক বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দান;
▪ এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলাদেশ এ দান;
▪ ঢাকা আহসানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতালে দান;
▪ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে নিয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের কোনো প্রতিষ্ঠানে অনুদান।
বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত পরিগণনা
অনুমোদনযোগ্য বিনিয়োগ রেয়াতের পরিমাণ এবং কর রেয়াত কিভাবে পরিগণনা করা হবে তা নিম্নে উদাহরণের সাহায্যে দেখানো হলো:
উদাহরণ–১০
ধরা যাক, মিজ সুক্তি রানী সরকার একজন সরকারি বেতন আদেশভুক্ত কর্মচারী। তাঁর বেতন খাত, গৃহ সম্পত্তি ও সঞ্চয়পত্রের সুদ খাতে আয় রয়েছে। ২০২৪-২০২৫ করবর্ষে উক্ত খাতসমূহে আয়ের পরিমাণ নিম্নরূপ:
আয়ের খাত | পরিমাণ (ট) |
(ক) বেতন খাতে আয় | ৭,১৮,২০০ |
(খ) গৃহ সম্পত্তি খাতে আয় | ১,২০,০০০ |
নিয়মিত উৎসের আয় | ৮,৩৮,২০০ |
(গ)সঞ্চয়পত্রের সুদ খাতে আয় (চূড়ান্ত করদায়)
(সঞ্চয়পত্রের সুদ হতে ১০% হারে উৎসে কর কর্তনের পরিমাণ ৫,০০০) |
৫০,০০০ |
মোট আয় | ৮,৮৮,২০০ |
জনাব মিজ সরকারের রেয়াতযোগ্য খাতে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল নিম্নরূপ:
ক্রম | বিনিয়োগের খাত | পরিমাণ (ট) |
১. | ভবিষ্য তহবিল আইন, ১৯২৫ অনুযায়ী প্রযোজ্য ভবিষ্য তহবিলে প্রদত্ত চাঁদা | ৯৬,০০০ |
২. | কল্যাণ তহবিলে প্রদত্ত চাঁদা এবং গোষ্ঠী বিমা স্কীমের কিস্তি | ৩,০০০ |
৩. | নতুন সঞ্চয়পত্র ক্রয় | ১,০০,০০০ |
৪. | জীবন বিমার কিস্তি প্রদান | ১২,০০০ |
৫. | স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ | ৫,০০০ |
মোট অনুমোদনযোগ্য বিনিয়োগ, দান ইত্যাদি | ২,১৬,০০০ |
করদাতার রেয়াত পূর্ববর্তী করদায় হবে নিম্নরূপ:
মোট আয় | করের পরিমাণ (ট) |
সঞ্চয়পত্রের সুদ বাদে নিয়মিত উৎসের আয় ৮,৩৮,২০০ টাকার এর উপর প্রযোজ্য আয়কর: | |
প্রথম ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর | শূন্য |
পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকার উপর ৫% | ৫,০০০ |
পরবর্তী ৩,৩৮,২০০ টাকার ঊপর ১০% | ৩৩,৮২০ |
সঞ্চয়পত্রের সুদ আয়ের জন্য প্রদেয় কর: | |
সঞ্চয়পত্রের সুদ আয়ের বিপরীতে উৎসে কর্তিত কর | ৫,০০০ |
রেয়াত পূর্ববর্তী করদায় | ৪৩,৮২০ |
মিজ সরকারের তথ্য অনুযায়ী কর রেয়াতের পরিমাণ হবে:
(ক) | সঞ্চয়পত্রের সুদ চূড়ান্ত করদায়ভুক্ত আয় হওয়ায় উক্ত আয় বিনিয়োগ রেয়াতের অনুমোদনযোগ্য সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ পর্যায়ে বিবেচিত হবেনা। তাই অনুমোদনযোগ্য অংক বিবেচনার জন্য উক্ত আয় ব্যতীত মোট আয় দাঁড়ায় (৮,৮৮,২০০ – ৫০,০০০) = ৮,৩৮,২০০ টাকা × ০.০৩ |
২৫,১৪৬ |
|
(খ) | মোট অনুমোদনযোগ্য বিনিয়োগ, দান ইত্যাদি ২,১৬,০০০ টাকা × ০.১৫ | ৩২,৪০০ | |
(গ) | ১০,০০,০০০ | ||
কর রেয়াতের পরিমাণ হবে [(ক) বা (খ) বা (গ), এ তিনটির মধ্যে যেটি কম] | ২৫,১৪৬ |
করদাতার কর রেয়াতের পরিমাণ হবে ২৫,১৪৬ টাকা।
নীট প্রদেয় কর:
নীট প্রদেয় করের পরিমাণ (৪৩,৮২০ – ২৫,১৪৬) ১৮,৬৭৪
বাদ: উৎসে কর্তিত কর ৫,০০০
অবশিষ্ট প্রদেয় করের পরিমাণ ১৩,৬৭৪
উদাহরণ–১১
ধরা যাক, জনাব তামজিদ ইয়ামিন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি পেনশনভোগী করদাতা। তাঁর গৃহ সম্পত্তি খাত, পেনশন, কৃষি আয় ও সঞ্চয়পত্রের সুদ আয় রয়েছে। ২০২৪-২০২৫ করবর্ষে উক্ত খাতসমূহে আয়ের পরিমাণ নিম্নরূপ:
আয়ের খাত | পরিমাণ (ট) |
(ক) গৃহ সম্পত্তি খাতে আয় | ৫,০০,০০০ |
(খ) কৃষি আয় | ১,০০,০০০ |
নিয়মিত উৎসের আয় | ৬,০০,০০০ |
(গ) সঞ্চয়পত্রের সুদ খাতে আয় (চূড়ান্ত করদায়) | ৫০,০০০ |
(সঞ্চয়পত্রের সুদ হতে ১০% হারে উৎসে কর কর্তনের পরিমাণ ৫,০০০ টাকা ) | |
(ঘ) পেনশন থেকে বার্ষিক প্রাপ্তি (কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত আয়) | |
মোট করযোগ্য আয় | ৬,৫০,০০০ |
জনাব ইয়ামিনের রেয়াত পাওয়ার যোগ্য খাতে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল নিম্নরূপ:
ক্রম | বিনিয়োগের খাত | পরিমাণ (ট) |
১ | নতুন সঞ্চয়পত্র ক্রয় | ১,০০,০০০ |
২ | জীবন বিমার কিস্তি প্রদান | ৫০,০০০ |
মোট অনুমোদনযোগ্য বিনিয়োগ, দান ইত্যাদি | ১,৫০,০০০ |
করদাতার রেয়াত পূর্ববর্তী করদায় হবে নিম্নরূপ:
মোট আয় | করের পরিমাণ (ট) |
সঞ্চয়পত্রের সুদ বাদে নিয়মিত উৎসের আয় ৬,০০,০০০ টাকার এর উপর প্রযোজ্য আয়কর: | |
প্রথম ৩,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর | শূন্য |
পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকার উপর ৫% | ৫,০০০ |
অবশিষ্ট ১,৫০,০০০ টাকার উপর ১০% | ১৫,০০০ |
সঞ্চয়পত্রের সুদ আয়ের জন্য প্রদেয় কর: | |
সঞ্চয়পত্রের সুদ ৫০,০০০ টাকার উপর উৎসে কর্তিত কর | ৫,০০০ |
রেয়াত পূর্ববর্তী করদায় | ২৫,০০০ |
জনাব ইয়ামিনের তথ্য অনুযায়ী কর রেয়াতের পরিমাণ হবে:
(ক) | সঞ্চয়পত্রের সুদ চূড়ান্ত করদায় এর আওতার আয় হওয়ায় উক্ত আয় বিনিয়োগ রেয়াতের অনুমোদনযোগ্য সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ পর্যায়ে বিবেচিত হবেনা। তাই অনুমোদনযোগ্য অংক বিবেচনার জন্য উক্ত আয় ব্যতীত মোট আয় হবে (৬,৫০,০০০ – ৫০,০০০) = ৬,০০,০০০ টাকা × ০.০৩ |
১৮,০০০ |
|
(খ) | মোট অনুমোদনযোগ্য বিনিয়োগ, দান ইত্যাদি ১,৫০,০০০ টাকা × ০.১৫ | ২২,৫০০ | |
(গ) | ১০,০০,০০০ | ||
কর রেয়াতের পরিমাণ হবে [(ক) বা (খ) বা (গ), এ তিনটির মধ্যে যেটি কম] | ১৮,০০০ |
করদাতার মোট কর রেয়াতের পরিমাণ হবে ১৮,০০০ টাকা।
নীট প্রদেয় কর:
নীট প্রদেয় করের পরিমাণ (২৫,০০০ – ১৮,০০০) ৭,০০০
বাদ: উৎসে কর্তিত কর ৫,০০০
২,০০০
প্রদেয় করের পরিমাণ ২,০০০
উদাহরণ-১২
ধরা যাক, জনাব মুনিফ মিকদাদ ২০২৪-২০২৫ করবর্ষে মোট আয়ের পরিমাণ ১৭,০০,০০০ টাকা। বিভিন্ন খাতে তার মোট বিনিয়োগ/দানের পরিমাণ নিম্নরূপ:
ক্রম | খাত | পরিমাণ (ট) |
১। | জীবন বিমার কিস্তি প্রদান | ৬০,০০০ |
২ | ডিপোজিট পেনশন স্কীমে বিনিয়োগ | ২,৪০,০০০ |
৩ | সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে বিনিয়োগ | ২,০০,০০০ |
৪ | যাকাত তহবিলে দান | ৫০,০০০ |
৫ | ল্যাপটপ ক্রয় | ১,০০,০০০ |
বিনিয়োগ, দান ইত্যাদি | ৬,৫০,০০০ |
জনাব মুনিফ মিকদাদের কর রেয়াত ও করদায়ের পরিমাণ হবে নিম্নরূপ:
কর রেয়াতযোগ্য বিনিয়োগ/দান:
ক্রম | খাত | পরিমাণ (ট) |
১ | জীবন বিমার কিস্তি প্রদান | ৬০,০০০ |
২ | ডিপোজিট পেনশন স্কীমে বিনিয়োগ (২ক ও ২খ এর মধ্যে যেটি কম) | ১,২০,০০০ |
২ক. প্রকৃত বিনিয়োগ ২,৪০,০০০ | ||
২খ. অনুমোদনযোগ্য সীমা ১,২০,০০০ | ||
৩ | সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে বিনিয়োগ | ২,০০,০০০ |
৪ | যাকাত তহবিলে দান | ৫০,০০০ |
৫ | ল্যাপটপ ক্রয় (অনুমোদনযোগ্য বিনিয়োগ নয়) ১,০০,০০০ | |
মোট অনুমোদনযোগ্য বিনিয়োগ, দান ইত্যাদি | ৪,৩০,০০০ |
রেয়াত পূর্ববর্তী করদায়:
প্রথম ৩,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর | শূন্য |
পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকা আয়ের উপর ৫% হারে | ৫,০০০ |
পরবর্তী ৪,০০,০০০ টাকা আয়ের উপর ১০% হারে | ৪০,০০০ |
পরবর্তী ৫,০০,০০০ টাকা আয়ের উপর ১৫% হারে | ৭৫,০০০ |
অবশিষ্ট ৩,৫০,০০০ টাকা আয়ের উপর ২০% হারে | ৭০,০০০ |
মোট | ১,৯০,০০০ |
কর রেয়াতের পরিমাণ:
(ক) | মোট আয় ১৭,০০,০০০ টাকা × ০.০৩ | ৫১,০০০ | |
(খ) | মোট রেয়াতযোগ্য বিনিয়োগ ৪,৩০,০০০ টাকা × ০.১৫ | ৬৪,৫০০ | |
(গ) | ১০,০০,০০০ | ||
কর রেয়াতের পরিমাণ হবে [(ক) বা (খ) বা (গ), এ তিনটির মধ্যে যেটি কম] | ৫১,০০০ |
করদাতার মোট কর রেয়াতের পরিমাণ ৫১,০০০ টাকা।
ফলে নীট প্রদেয় করের পরিমাণ (১,৯০,০০০ – ৫১,০০০) = ১,৩৯,০০০ টাকা।
উদাহরণ-১৩
মিজ তানিশা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের একজন করদাতা। তিনি প্রথম বারের মতো রিটার্ন দাখিল করবেন। ২০২৪-২০২৫ করবর্ষে তার মোট আয়ের পরিমাণ ৬,০০,০০০ টাকা। বিভিন্ন খাতে তার মোট বিনিয়োগের পরিমাণ নিম্নরূপ:
ক্রম | খাত | পরিমাণ (ট) |
১ | জীবন বিমার কিস্তি প্রদান | ৬০,০০০ |
২ | ডিপোজিট পেনশন স্কীমে বিনিয়োগ | ১,৫০,০০০ |
৩ | সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে বিনিয়োগ | ৫০,০০০ |
মোট বিনিয়োগ | ২,৬০,০০০ |
মিজ্ তানিশার কর রেয়াত ও করদায়ের পরিমাণ নিম্নরূপ হবে:
১. কর রেয়াতযোগ্য বিনিয়োগ নির্ধারণ-
ক্রম | খাত | পরিমাণ (ট) |
১ | জীবন বিমার কিস্তি প্রদান | ৬০,০০০ |
২ | ডিপোজিট পেনশন স্কীমে বিনিয়োগ (২ক ও ২খ এর মধ্যে যেটি কম) | ১,২০,০০০ |
২ক. প্রকৃত বিনিয়োগ ১,৫০,০০০ | ||
২খ. অনুমোদনযোগ্য সীমা ১,২০,০০০ | ||
৩ | সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে বিনিয়োগ | ৫০,০০০ |
মোট অনুমোদনযোগ্য বিনিয়োগ | ২,৩০,০০০ |
২. রেয়াত পূর্ববর্তী করদায় নির্ধারণ:
প্রথম ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর | শূন্য |
পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকা আয়ের উপর ৫% হারে | ৫,০০০ |
পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকা আয়ের উপর ১০% হারে | ১০,০০০ |
মোট | ১৫,০০০ |
৩. রেয়াতের পরিমাণ নির্ধারণ:
(ক) | মোট আয় ৬,০০,০০০ টাকা × .০৩ | ১৮,০০০ | |
(খ) | মোট অনুমোদনযোগ্য বিনিয়োগ ২,৩০,০০০ টাকা × ০.১৫ | ৩৪,৫০০ | |
(গ) | ১০,০০,০০০ | ||
কর রেয়াতের পরিমাণ হবে [(ক) বা (খ) বা (গ), এ তিনটির মধ্যে যেটি কম] | ১৮,০০০ |
করদাতার মোট রেয়াতের পরিমাণ হবে ১৮,০০০ টাকা।
৫. প্রদেয় কর নির্ধারণ:
করদাতার রেয়াত পূর্ববর্তী করদায় = ১৫,০০০
প্রাপ্ত কর রেয়াত = ১৮,০০০
পার্থক্য = (৩,০০০)
করদাতা যেহেতু ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দা তাই তার প্রদেয় করের পরিমাণ ন্যূনতম ৫,০০০ টাকা হবে।
কর দিবসের মধ্যে রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে বিনিয়োগজনিত কর রেয়াতের প্রাপ্যতা
একজন স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা যিনি ইতোপূর্বে রিটার্ন দাখিল করেছেন তিনি ৩০ নভেম্বর ২০২৪ তারিখের মধ্যে, অর্থাৎ করদিবসের মধ্যে ২০২৪-২০২৫ করবর্ষের রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হলে করদাতার বিনিয়োগজনিত কর রেয়াতের প্রাপ্যতা থাকবে না। এক্ষেত্রে মোট আয়ের উপর আরোপযোগ্য আয়করের অংক থেকে কর রেয়াতের কোনো অংক বাদ না দিয়ে প্রদেয় করের অংক পরিগণনা করতে হবে।
উদাহরণ-১৪
মিজ নাইফা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের একজন করদাতা। তিনি দ্বিতীয়বারের মতো রিটার্ন দাখিল করবেন। ২০২৪-২০২৫ করবর্ষে তার মোট আয়ের পরিমাণ ৬,০০,০০০ টাকা। ২০২৪-২০২৫ করবর্ষের জন্য মিজ্ নাইফার রিটার্ন দাখিলের নির্ধারিত শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০২৪ । তিনি করদিবসের মধ্যে ২০২৪-২০২৫ করবর্ষের রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
বিভিন্ন খাতে তার মোট বিনিয়োগের পরিমাণ নিম্নরূপ:
ক্রম | খাত | পরিমাণ (ট) |
১. | জীবন বিমার কিস্তি প্রদান | ৬০,০০০ |
২. | ডিপোজিট পেনশন স্কীমে বিনিয়োগ | ১,৫০,০০০ |
৩. | নতুন সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে বিনিয়োগ | ১০,০০,০০০ |
মোট বিনিয়োগ | ১২,১০,০০০ |
মিজ্ নাইফার কর রেয়াত ও করদায়ের পরিমাণ নিম্নরূপ হবে:
১. কর রেয়াতযোগ্য বিনিয়োগ নির্ধারণ-
ক্রম | খাত | পরিমাণ |
১. | জীবন বিমার কিস্তি প্রদান | ৬০,০০০ |
২. | ডিপোজিট পেনশন স্কীমে বিনিয়োগ (২ক ও ২খ এর মধ্যে যেটি কম) | ১,২০,০০০ |
২ক. প্রকৃত বিনিয়োগ ১,৫০,০০০ | ||
২খ. অনুমোদনযোগ্য সীমা ১,২০,০০০ | ||
৩. | নতুন সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে বিনিয়োগ (৩ক ও ৩খ এর মধ্যে যেটি কম) | ৫,০০,০০০ |
৩ক. প্রকৃত বিনিয়োগ ১০,০০,০০০ | ||
৩খ. অনুমোদনযোগ্য সীমা ৫,০০,০০০ | ||
মোট অনুমোদনযোগ্য বিনিয়োগ | ৬,৮০,০০০ |
২. রেয়াত পূর্ববর্তী করদায় নির্ধারণ:
প্রথম ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর | শূন্য |
পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকা আয়ের উপর ৫% হারে | ৫,০০০ |
পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকা আয়ের উপর ১০% হারে | ১০,০০০ |
মোট | ১৫,০০০ |
৩. রেয়াতের পরিমাণ নির্ধারণ:
করদাতা একজন স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা যিনি ইতোপূর্বে রিটার্ন দাখিল করেছেন। তিনি ৩০ নভেম্বর ২০২৪ তারিখের মধ্যে, অর্থাৎ করদিবসের মধ্যে ২০২৪-২০২৫ করবর্ষের রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হলে করদাতার বিনিয়োগজনিত কর রেয়াতের প্রাপ্যতা থাকবে না। এক্ষেত্রে মোট আয়ের উপর আরোপযোগ্য আয়করের অংক থেকে কর রেয়াতের কোনো অংক বাদ না দিয়ে প্রদেয় করের অংক পাওয়া যাবে। সুতরাং, করদাতার মোট রেয়াতের পরিমাণ হবে শূন্য টাকা।
৪. প্রদেয় কর নির্ধারণ:
করদাতার রেয়াত পূর্ববর্তী করদায় = ১৫,০০০
প্রাপ্ত কর রেয়াত = ০
পার্থক্য = ১৫,০০০
করদাতা যেহেতু করদিবসের মধ্যে ২০২৪-২০২৫ করবর্ষের রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হয়েছেন, সেহেতু করদাতার বিনিয়োগজনিত কর রেয়াতের প্রাপ্যতা শূন্য এবং করদাতাকে ধারা ১৭৪ মোতাবেক কর পরিগনণা করে কর পরিশোধ করতে হবে।
স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার সারচার্জ
স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার ক্ষেত্রে, আয়কর আইন, ২০২৩ (২০২৩ সনের ১২ নং আইন) এর ধারা ১৬৭ অনুযায়ী পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণীতে প্রদর্শিত নিম্নবর্ণিত সম্পদের ভিত্তিতে, এই অনুচ্ছেদ এর অধীন সারচার্জ পরিগণনার পূর্বে পরিবেশ সারচার্জ ব্যতীত নির্ধারিত প্রদেয় করের উপর নিম্নরূপ হারে সারচার্জ প্রদেয় হবে, যথা:-
সম্পদ | সারচার্জের হার |
(ক) নীট পরিসম্পদের মূল্যমান চার কোটি টাকা পর্যন্ত- | শূন্য |
(খ) নীট পরিসম্পদের মূল্যমান চার কোটি টাকার অধিক কিন্তু দশ কোটি টাকার অধিক নহে;
বা, নিজ নামে একের অধিক মোটর গাড়ি বা, মোট ৮,০০০ বর্গফুটের অধিক আয়তনের গৃহ-সম্পত্তি |
১০% |
(গ) নীট পরিসম্পদের মূল্যমান দশ কোটি টাকার অধিক কিন্তু বিশ কোটি টাকার অধিক নহে- | ২০% |
(ঘ) নীট পরিসম্পদের মূল্যমান বিশ কোটি টাকার অধিক কিন্তু পঞ্চাশ কোটি টাকার অধিক নহে- | ৩০% |
(ঙ) নীট পরিসম্পদের মূল্যমান পঞ্চাশ কোটি টাকার অধিক হইলে | ৩৫% |
এখানে,
(১) “নীট পরিসম্পদের মূল্যমান” বলতে আয়কর আইন, ২০২৩ (২০২৩ সনের ১২ নং আইন) এর ধারা ১৬৭ অনুযায়ী পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণীতে প্রদর্শনযোগ্য নীট পরিসম্পদের মূল্যমান বুঝাবে; এবং
(২) “মোটর গাড়ি” বলতে বাস, মিনিবাস, কোস্টার, প্রাইম মুভার, ট্রাক, লরি, ট্যাংক লরি, পিকআপ ভ্যান, হিউম্যান হলার, অটোরিকশা ও মোটর সাইকেল ব্যতীত অন্যান্য মোটরযান অন্তর্ভূক্ত হবে।
এছাড়া, সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সকল প্রকার তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারক করদাতার উক্ত ব্যবসায় হতে অর্জিত আয়ের উপর ২.৫% হারে সারচার্জ প্রদেয় হবে।
কোনো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণের গম্যতার ক্ষেত্রে দেশে বলবৎ আইনি বিধান অনুযায়ী উপযুক্ত ব্যবস্থা না রাখিলে উক্ত প্রতিষ্ঠানের অর্জিত আয়ের উপর ২.৫% হারে সারচার্জ প্রদেয় হইবে।
অর্থাৎ, সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ যে কোনো তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারক কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার নীট পরিসম্পদের মূল্যমান চার কোটি টাকা অতিক্রম করলে তাকে নীট সম্পদের ভিত্তিতে প্রদেয় সারচার্জ এবং তার উক্ত ব্যবসায় হতে অর্জিত আয়ের উপর ২.৫% হারে সারচার্জ- উভয়টি পরিশোধ করতে হবে।
একজন পুরুষ করদাতার সারচার্জ কিভাবে পরিগণনা করতে হবে তা নিচের উদাহরণগুলোর মাধ্যমে দেখানো হলো:
টাকা | ||
(১) | করদাতার প্রদর্শনযোগ্য নীট সম্পদের মূল্যমান | ২,৮০,০০,০০০ |
মোট আয় | ৫,০০,০০০ | |
আয়ের উপর প্রদেয় আয়করের পরিমাণ | ১০,০০০ | |
প্রদেয় সারচার্জের পরিমাণ | শূন্য |
(২) | করদাতার প্রদর্শনযোগ্য নীট সম্পদের মূল্যমান | ২,৯০,০০,০০০ |
মোট আয় | ৩,৪০,০০০ | |
আয়ের উপর প্রদেয় আয়করের পরিমাণ | শূন্য | |
প্রদেয় সারচার্জের পরিমাণ | শূন্য |
(৩) | করদাতার প্রদর্শনযোগ্য নীট সম্পদের মূল্যমান | ৩,১০,০০,০০০ |
মোট আয় | ৫,০০,০০০ | |
আয়ের উপর প্রদেয় আয়করের পরিমাণ | ১০,০০০ | |
প্রদেয় সারচার্জের পরিমাণ (১০%) | শূন্য |
(৪) | করদাতার প্রদর্শনযোগ্য নীট সম্পদের মূল্যমান | ১,৩০,০০,০০০ |
করদাতার নিজ নামে দুইটি মোটরগাড়ি রয়েছে | ||
মোট আয় | ৭,০০,০০০ | |
আয়ের উপর প্রদেয় আয়করের পরিমাণ | ৩০,০০০ | |
প্রদেয় সারচার্জের পরিমাণ (১০%) | ৩,০০০ |
(৫) | করদাতার প্রদর্শনযোগ্য নীট সম্পদের মূল্যমান | ২,০০,০০,০০০ |
করদাতার সর্বমোট ৮,০০০ বর্গফুটের অধিক আয়তনের গৃহ-সম্পত্তি রয়েছে | ||
মোট আয় | ৫,০০,০০০ | |
আয়ের উপর প্রদেয় আয়করের পরিমাণ | ১০,০০০ | |
প্রদেয় সারচার্জের পরিমাণ (১০%) | ১,০০০ |
(৬) | করদাতার প্রদর্শনযোগ্য নীট সম্পদের মূল্যমান
করদাতার নিজ নামে দুইটি মোটরগাড়ি রয়েছে |
৭,৫০,০০,০০০ |
মোট আয় | ৭,০০,০০০ | |
আয়ের উপর প্রদেয় আয়করের পরিমাণ | ৩০,০০০ | |
প্রদেয় সারচার্জের পরিমাণ (১০%) | ৩,০০০ | |
|
||
(৭) | করদাতার প্রদর্শনযোগ্য নীট সম্পদের মূল্যমান | ১২,৫০,০০,০০০ |
মোট আয় | ৫,০০,০০০ | |
আয়ের উপর প্রদেয় আয়করের পরিমাণ | ১০,০০০ | |
প্রদেয় সারচার্জের পরিমাণ (২০%) | ২,০০০ |
(৮) | করদাতার প্রদর্শনযোগ্য নীট সম্পদের মূল্যমান | ১৫,৫০,০০,০০০ |
মোট আয় | ৫,০০,০০০ | |
আয়ের উপর প্রদেয় আয়করের পরিমাণ | ১০,০০০ | |
প্রদেয় সারচার্জের পরিমাণ (২০%) | ২,০০০ | |
(৯) | করদাতার প্রদর্শনযোগ্য নীট সম্পদের মূল্যমান | ২০,০০,০০,০০০ |
জর্দা প্রস্তুত ব্যবসার আয় | ৫,০০,০০০ | |
অন্যান্য সূত্রের আয় | ৩,৬০,০০০ | |
মোট আয় | ৮,৬০,০০০ | |
আয়ের উপর প্রদেয় আয়করের পরিমাণ [(ক)+(খ)] | ২,২৫,৫০০ | |
(ক) জর্দা প্রস্তুত ব্যবসার আয়ের উপর (৪৫%): ২,২৫,০০০ | ||
(খ) অন্যান্য সূত্রের আয়ের উপর (৩,৬০,০০০ -৩,৫০,০০০) × ৫%= ৫০০ | ||
প্রদেয় সারচার্জের পরিমাণ: |
৫৭,৬০০ |
|
(ক) ২,২৫,৫০০ × ২০% = ৪৫,১০০ | ||
(খ) ৫,০০,০০০ × ২.৫% = ১২,৫০০ | ||
(১০) | করদাতার প্রদর্শনযোগ্য নীট সম্পদের মূল্যমান | ৫০,০০,০০,০০০ |
মোট আয় | ৭,০০,০০০ | |
আয়ের উপর প্রদেয় আয়করের পরিমাণ | ৩০,০০০ | |
প্রদেয় সারচার্জের পরিমাণ (৩০% হারে): | ৯,০০০ |
(১১) | করদাতার প্রদর্শিত নীট সম্পদের মূল্যমান | ৫৫,০০,০০,০০০ |
মোট আয় | ৮০,০০,০০০ | |
আয়ের উপর প্রদেয় আয়করের পরিমাণ | ১৭,৮২,৫০০ | |
প্রদেয় সারচার্জের পরিমাণ (৩৫% হারে): | ৬,২৩,৮৭৫ |
(১২) | করদাতার প্রদর্শিত নীট সম্পদের মূল্যমান | ৫৫,০০,০০,০০০ |
মোট আয় | ২,৮০,০০০ | |
আয়ের উপর প্রদেয় আয়করের পরিমাণ | শূন্য | |
প্রদেয় সারচার্জের পরিমাণ (৩৫% হারে): | শূন্য |
করদিবসের মধ্যে রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে কর পরিপণনা
একজন স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা ৩০ নভেম্বর ২০২৪ তারিখের মধ্যে, অর্থাৎ করদিবসের মধ্যে ২০২৪-২০২৫ করবর্ষের রিটার্ন দাখিল করতে ব্যর্থ হলে করদাতার প্রদেয় করদায় আয়কর আইনের ধারা ১৭৪ অনুযায়ী নির্ধারিত হবে এবং করদাতাকে সে মোতাবেক কর পরিশোধ করতে হবে।
উল্লেখ্য, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থতার ক্ষেত্রে ১৭৪ ধারানুযায়ী কর নির্ধারণ ছাড়াও অতিরিক্ত সরল সুদ ও জরিমানা আরোপসহ আয়কর অধ্যাদেশের অধীন অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের বিধানও যথারীতি প্রয়োগযোগ্য হবে।
ধারা ১৬৬ অনুযায়ী রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এমন কোনো করদাতা করদিবসের মধ্যে রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থ হলে, আয়কর আইনের অন্যান্য বিধানের অধীন উদ্ভূত দায় অক্ষুণ্ন রেখে নিম্নবর্ণিত নিয়মে করদাতার কর নির্ধারিত ও পরিশোধিত হবে, যথা:-
ক = খ + (খ – গ) × ঘ × ০.০২, যেখানে,
ক = মোট প্রদেয় করের পরিমাণ;
খ = করদাতা করদিবসের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করলে মোট যে পরিমাণ কর পরিশোধ করতেন সে অংক, তবে এক্ষেত্রে-
(অ) কোনো প্রকার কর অব্যাহতি প্রযোজ্য না হলে যেভাবে কর পরিগণনা করা হত সেভাবে কর পরিগণনা করতে হবে; এবং
(আ) ন্যূনতম কর, সারচার্জ ও সরল সুদ ব্যতীত এই আইনের অধীন প্রযোজ্য বা ধার্যকৃত অন্য কোনো জরিমানা বা অংক এর অন্তর্ভুক্ত হবে না;
গ = উক্ত আয়বর্ষে করদাতা কর্তৃক পরিশোধিত অগ্রিম কর ও উৎসে করের সমষ্টি;
ঘ = নিম্নবর্ণিতরূপে নির্ধারিত মাসের সংখ্যা, যথা:-
(অ) করদিবস অতিক্রান্ত হবার পর মাসের সংখ্যা যা অনধিক ২৪ (চব্বিশ) হবে;
(আ) কোনো মাসের ভগ্নাংশও পূর্ণ মাস হিসাবে গণ্য হবে।
উদাহরণ–১৫
৩০ জুন ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত আয়বর্ষে জনাব ঝিলিক দেবনাথ বিন্দুর মোট আয় ছিল ৮,০০,০০০ টাকা। তিনি ২০২৩-২০২৪ অর্থবর্ষে ১৮,০০০ টাকা অগ্রিম কর ও ৬,০০০ টাকা উৎস কর প্রদান করেছেন। ২০২৪-২৫ করবর্ষের জন্য তাঁর রিটার্ন দাখিলের সর্বশেষ সময় ছিল ৩০ নভেম্বর ২০২৪। তিনি যথাসময়ে রিটার্ন দাখিল করেন নাই। পরে, ২০২৪-২৫ করবর্ষের জন্য জনাব ঝিলিক দেবনাথ বিন্দু স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে রিটার্ন দাখিল করেছেন।
জনাব ঝিলিক দেবনাথ বিন্দু ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে ১১,০০০ টাকার এ-চালানসহ স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন দাখিল করেন।
এক্ষেত্রে,
(ক) মোট আয়ের উপর নিরূপিত প্রযোজ্য কর ছিল ৩৫,০০০ টাকা।
(খ) অগ্রিম কর ও উৎস করের সমষ্টি: (১৮,০০০ + ৬,০০০) = ২৪,০০০ টাকা।
১ ডিসেম্বর ২০২৪ হতে ১৫ জানুয়ারি ২০২৫= ১ মাস ১৫দিন।
ফলে, নিম্নবর্ণিত নিয়মে করদাতার কর নির্ধারিত ও পরিশোধিত হইবে,
ক = খ + (খ – গ) × ঘ × ০.০২, যেখানে,
ক = মোট প্রদেয় করের পরিমাণ;
খ = করদাতা করদিবসের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করলে মোট যে পরিমাণ কর পরিশোধ করতেন সে অংক, তবে এক্ষেত্রে-
(অ) কোনো প্রকার কর অব্যাহতি প্রযোজ্য না হলে যেভাবে কর পরিগণনা করা হত সেভাবে কর পরিগণনা করতে হবে; এবং
(আ) ন্যূনতম কর, সারচার্জ ও সরল সুদ ব্যতীত এই আইনের অধীন প্রযোজ্য বা ধার্যকৃত অন্য কোনো জরিমানা বা অংক এর অন্তর্ভুক্ত হবে না;
গ = উক্ত আয়বর্ষে করদাতা কর্তৃক পরিশোধিত অগ্রিম কর ও উৎসে করের সমষ্টি;
ঘ = নিম্নবর্ণিতরূপে নির্ধারিত মাসের সংখ্যা, যথা:-
(অ) করদিবস অতিক্রান্ত হবার পর মাসের সংখ্যা যা অনধিক ২৪ (চব্বিশ) হবে;
(আ) কোনো মাসের ভগ্নাংশও পূর্ণ মাস হিসাবে গণ্য হবে।
সুতরাং, এক্ষেত্রে,
মোট প্রদেয় করের পরিমাণ = ৩৫,০০০ + (৩৫,০০০- ২৪,০০০) × ২ × ০.০২
= ৩৫,৪৪০ টাকা
(বাদ) অগ্রিম কর ও উৎস করের সমষ্টি: (১৮,০০০ + ৬,০০০) = ২৪,০০০ টাকা।
প্রদেয় করের পরিমাণ = ১১,৪৪০ টাকা
অতিরিক্ত প্রদেয় করের পরিমাণ (১১,৪৪০ – ১১,০০০) টাকা = ৪৪০ টাকা
উৎসে এবং অগ্রিম হিসেবে পরিশোধিত করের ক্রেডিট
(ক) উৎসে কর:
আয়বর্ষে করদাতা কর্তৃক উৎসে পরিশোধিত কর আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো করদাতার বেতন, ব্যাংক সুদ আয়, গৃহ-সম্পত্তির বার্ষিক ভাড়া আয়, পেশাগত ফি প্রাপ্তি ইত্যাদি থেকে উৎসে কর কর্তন করা হলে তা রিটার্নে প্রদর্শন করতে হবে। উৎসে কর্তিত/সংগৃহীত করের স্বপক্ষে কর কর্তনকারী/সংগ্রহকারী কর্তৃপক্ষের সার্টিফিকেট রিটার্নের সাথে দাখিল করতে হবে।
(খ) অগ্রিম কর:
করদাতা যদি অগ্রিম কর পরিশোধ করে থাকেন তাহলে পরিশোধিত করের পরিমাণ আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করতে হবে। অগ্রিম কর পরিশোধের প্রমাণও রিটার্নের সাথে দাখিল করতে হবে।
উদাহরণ-১৬:
ধরা যাক, ১ জুলাই ২০২৩ হতে ৩০ জুন ২০২৪ তারিখ এর মধ্যে কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা তার গাড়ির ফিটনেস নবায়ন কালে অগ্রিম কর হিসেবে ২০২৪-২০২৫ করবর্ষের জন্য ২৫,০০০ টাকা পরিশোধ করেছেন। তাহলে তিনি অগ্রিম কর পরিশোধের প্রমাণ হিসেবে এ-চালানের কপি ২০২৪-২০২৫ করবর্ষের জন্য দাখিলকৃত রিটার্নের সাথে দাখিল করবেন। অন্যথায় তিনি পরিশোধিত অগ্রিম করের ক্রেডিট দাবী করতে পারবেন না।
রিটার্নের ভিত্তিতে প্রদত্ত কর (ধারা ১৭৩ অনুযায়ী)
রিটার্নে প্রদর্শিত মোট আয়ের ভিত্তিতে নিরূপিত প্রদেয় আয়কর হতে উৎসে কর্তিত কর এবং অগ্রিম প্রদত্ত কর বাদ দিয়ে অবশিষ্ট কর পরিশোধের সমর্থনে এ-চালান এর মাধ্যমে জমা দিতে হবে।
প্রত্যর্পণযোগ্য করের সমন্বয়
পূর্বের বছরগুলোতে করদাতার যদি কর ফেরত দাবী/সৃষ্টি থাকে তবে তা তিনি এখানে কর পরিশোধ হিসেবে দাবী করতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে কোনো করবর্ষের কর ফেরত দাবী করা হয়েছে তা উল্লেখ করতে হবে। ধরা যাক, ২০২৩-২০২৪ করবর্ষে করদাতার ফেরতযোগ্য করের পরিমাণ ছিল ৫,০০০ টাকা। ২০২৪-২০২৫ করবর্ষের রিটার্নে প্রদর্শিত আয় অনুসারে প্রদেয় মোট আয়করের পরিমাণ ৮,০০০ টাকা। এ অবস্থায় ২০২৩-২০২৪ করবর্ষের ফেরতযোগ্য ৫,০০০ টাকা ২০২৪-২০২৫ করবর্ষে করদাবীর বিপরীতে কর পরিশোধ হিসেবে দাবী/সমন্বয় করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ২০২৪-২০২৫ করবর্ষের জন্য তাকে অবশিষ্ট ৩,০০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
করমুক্ত বা কর অব্যাহতি প্রাপ্ত আয়
করদাতার করমুক্ত এবং কর অব্যাহতি প্রাপ্ত আয় থাকলে তা রিটার্নে উল্লেখ করতে হবে। ব্যক্তি করদাতার করমুক্ত আয়ের কয়েকটি খাত নীচে উল্লেখ করা হলো:
(১) সরকারি পেনশন তহবিল হতে করদাতা কর্তৃক গৃহীত বা করদাতার বকেয়া পেনশন;
(২) সরকারি আনুতোষিক তহবিল হতে করদাতা কর্তৃক আনুতোষিক হিসাবে গৃহীত অনধিক ২ (দুই) কোটি ৫০ (পঞ্চাশ) লক্ষ টাকা আয়;
(৩) কোনো স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিল, অনুমোদিত বার্ধক্য তহবিল, পেনশন তহবিল এবং অনুমোদিত আনুতোষিক তহবিল হতে তাদের সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণকৃত আয় যা উক্ত তহবিলের হাতে করারোপিত হয়েছে:
(৪) ভবিষ্য তহবিল আইন, ১৯২৫ (১৯২৫ সনের ১৯ নং আইন) প্রযোজ্য এইরূপ কোনো ভবিষ্য তহবিলে উদ্ভূত বা উপচিত অথবা ভবিষ্য তহবিল হইতে উদ্ভূত কোনো আয়;
(৫) সরকারি সংস্থা, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, বা স্বায়ত্বশাসিত বা আধা-স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা ও তাহাদের নিয়ন্ত্রিত ইউনিটসমূহ বা প্রতিষ্ঠানসমূহের কোনো কর্মচারী কর্তৃক স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের সময় এই উদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত কোনো পরিকল্প অনুসারে গৃহীত যেকোনো পরিমাণ অর্থ;
(৬) পেনশনারস সেভিংস সার্টিফিকেট হইতে সুদ হিসাবে গৃহীত কোনো অর্থ বা গৃহীত অর্থের সমষ্টি, যেইক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আয়বর্ষের শেষে উক্ত সার্টিফিকেটের বিনিয়োগকৃত অর্থের মোট পুঞ্জীভূত অর্জিত মূল্য/ প্রকৃত মূল্য/ আক্ষরিক মূল্য/ ক্রয় মূল্য অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা হয়;
(৭) কোনো নিয়োগকারী কর্তৃক কোনো কর্মচারীর ব্যয় পুনর্ভরণ যদি-
(ক) উক্ত ব্যয় সম্পূর্ণভাবে এবং আবশ্যকতা অনুসারে কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সূত্রে ব্যয়িত করা হয়; এবং
(খ) নিয়োগকারীর জন্য উক্ত কর্মচারীর মাধ্যমে এইরূপ ব্যয় নির্বাহ সর্বাধিক সুবিধাজনক ছিল;
(৮) ট্রাস্টের সুবিধাভোগী বা তহবিলে অংশগ্রহণকারী কর্তৃক ট্রাস্ট বা তহবিলের আয়ের অংশ হিসেবে প্রাপ্ত আয়ের অংশ, যাহার উপর উক্ত ট্রাস্ট বা তহবিল কর্তৃক কর পরিশোধ করা হয়েছে;
(৯) হিন্দু অবিভক্ত পরিবারের সদস্য হিসাবে একজন করদাতা যে পরিমাণ অর্থ প্রাপ্ত হন, যাহার উপর উক্ত পরিবার কর্তৃক কর পরিশোধিত;
(১০) বাংলাদেশি কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতা কর্তৃক বিদেশে উপার্জিত কোনো আয় যা তিনি বৈদেশিক রেমিটেন্স সম্পর্কিত বিদ্যমান আইন অনুসারে বাংলাদেশে আনয়ন করেন;
(১১) কোনো করদাতা কর্তৃক ওয়েজ আর্নারস ডেভলপমেন্ট ফান্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড, ইউরো প্রিমিয়াম বন্ড, ইউরো ইনভেস্টমেন্ট বন্ড, পাউন্ড স্টারলিং ইনভেস্টমেন্ট বন্ড বা পাউন্ড স্টারলিং প্রিমিয়াম বন্ড হতে গৃহীত কোনো আয়;
(১২) রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তির আয় যা কেবল উক্ত পার্বত্য জেলায় পরিচালিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হতে উদ্ভূত হয়েছে;
(১৩) কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তির “কৃষি হইতে আয়” খাতের আওতাভুক্ত অনধিক ২ (দুই) লক্ষ টাকা পর্যন্ত কোনো আয়, যদি উক্ত ব্যক্তি-
(ক) পেশায় একজন কৃষক হন;
(খ) এর সংশ্লিষ্ট আয়বর্ষে নিম্নবর্ণিত আয় ব্যতীত কোনো আয় না থাকে, যথা;-
(অ) জমি চাষাবাদ হতে উদ্ভূত আয়;
(আ) সুদ বা মুনাফা বাবদ অনধিক ২০ (বিশ) হাজার টাকা আয়।
(১৪) ০১, জুলাই ২০২৪ তারিখ হতে নিম্নবর্ণিত ব্যবসায়ের সকল আয়, ব্যয় ও বিনিয়োগ শতভাগ ব্যাংক ট্রান্সফার এর মাধ্যমে সম্পন্ন করার শর্তে ১ জুলাই, ২০২৪ হইতে ৩০ জুন, ২০২৭ পর্যন্ত উক্ত ব্যবসাসমূহ হতে উদ্ভূত কোনো নিবাসী ব্যক্তি বা অনিবাসী বাংলাদেশি স্বাভাবিক ব্যক্তির আয় , যথা:-
(ক) এআই বেজড্ সলিউশন ডেভেলপমেন্ট (AI based solution development);
(খ) ব্লকচেইন বেজড্ সলিউশন ডেভেলপমেন্ট (blockchain based solution development);
(গ) রোবোটিক্স প্রসেস আউটসোর্সিং (robotics process outsourcing);
(ঘ) সফটওয়্যার অ্যাজ আ সার্ভিস (software as a service);
(ঙ) সাইবার সিকিউরিটি সার্ভিস (cyber security service);
(চ) ডিজিটাল ডেটা এনালাইটিক্স ও ডেটা সাইয়েন্স (digital data analytics and data science);
(ছ) মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস (mobile application development service);
(জ) সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও কাস্টমাইজেশন (software development and customization);
(ঝ) সফটওয়্যার টেস্ট ল্যাব সার্ভিস (software test lab service);
(ঞ) ওয়েব লিস্টিং, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট ও সার্ভিস (web listing, website development and service);
(ট) আইটি সহায়তা ও সফটওয়্যার মেইনটেন্যান্স সার্ভিস (IT assistance and software maintenance service);
(ঠ) জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস (geographic information service);
(ড) ডিজিটাল এনিমেশন ডেভেলপমেন্ট (digital animation development);
(ঢ) ডিজিটাল গ্রাফিক্স ডিজাইন (digital graphics design);
(ণ) ডিজিটাল ডেটা এন্ট্রি ও প্রসেসিং (digital data entry and processing);
(ত) ই-লার্নিং প্লাটফর্ম ও ই-পাব্লিকেশন (e-learning platform and e-publication);
(থ) আইটি ফ্রি ল্যান্সিং (IT freelancing);
(দ) কল সেন্টার সার্ভিস (call center service);
(ধ) ডকুমেন্ট কনভারশন, ইমেজিং ও ডিজিটাল আর্কাইভিং (document conversion, imaging and digital archiving)।
তবে, যে সকল খাতের আয় ৩০ জুন ২০২৪ পর্যন্ত করমুক্ত ছিলো কিন্তু প্রতিস্থাপিত বিধানে আর করমুক্ত নেই, তাদের ২০২৩-২০২৪ আয়বর্ষের আয় ২০২৪-২০২৫ করবর্ষে করমুক্ত থাকবে।
(১৫) জুলাই ১, ২০২০ হইতে ৩০ জুন, ২০২৪ তারিখের মধ্যে হস্তশিল্প রপ্তানি হতে উদ্ভূত কোনো আয়;
(১৬) যেকোনো পণ্য উৎপাদনে জড়িত ক্ষুদ্র বা মাঝারি শিল্প হতে উদ্ভূত আয়, যার-
(ক) শিল্পটি নারীর মালিকানাধীন হলে, বাৎসরিক টার্নওভার অনধিক ৭০ (সত্তর) লক্ষ টাকা;
(খ) অন্যান্য ক্ষেত্রে, বাৎসরিক টার্নওভার অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) লক্ষ টাকা;
(১৭) নিম্নবর্ণিত শর্ত সাপেক্ষে, ব্যাংক, বিমা বা কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানি ব্যতীত ব্যক্তি কর্তৃক জিরো কুপন বন্ড হতে উদ্ভূত কোনো আয়, যথা:-
(ক) বাংলাদেশ ব্যাংক বা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করে কোনো ব্যাংক, বিমা বা ফাইন্যান্স কোম্পানি কর্তৃক উক্ত জিরো কুপন বন্ড ইস্যু করা হয়েছে;
(খ) বাংলাদেশ ব্যাংক বা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করে কোনো ব্যাংক, বিমা বা ফাইন্যান্স কোম্পানি ব্যতীত অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান কর্তৃক জিরো কুপন বন্ড ইস্যু করা হয়েছে;
(১৮) “চাকরি হইতে আয়” হিসাবে পরিগণিত আয়ের এক-তৃতীয়াংশ বা ৪ (চার) লক্ষ ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা যা কম;
(১৯) কোনো ব্যক্তি কর্তৃক বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট হতে গৃহীত সম্মানি বা ভাতা প্রকৃতির কোনো অর্থ বা সরকারের নিকট হতে গৃহীত কোনো কল্যাণ ভাতা;
(২০) সরকার হতে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক গৃহীত কোনো পুরস্কার;
(২১) কোনো বৃদ্ধাশ্রম পরিচালনা হতে উদ্ভূত কোনো আয়;
(২২) স্বামী-স্ত্রী, মাতা-পিতা বা সন্তানের নিকট হতে দান হিসেবে গৃহীত কোনো পরিসম্পদ যদি তা দাতা ও গ্রহীতার রিটার্নে প্রদর্শিত হয়। তবে, যেক্ষেত্রে উক্ত দান বিদেশ হতে বাংলাদেশে অবস্থিত গ্রহীতার নিকট ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রেরিত হয় সেক্ষেত্রে দাতার রিটার্নে প্রদর্শনের শর্ত প্রযোজ্য হবে না;
(২৩) কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তি কর্তৃক গৃহীত অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) লক্ষ টাকার কোন মূলধনী আয়, যা –
ক) তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি বা তহবিলের শেয়ার বা ইউনিট হস্তান্তর হতে অর্জিত হয়েছে;
খ) কোনো কোম্পানি বা তহবিলের স্পন্সর, ডিরেক্টর বা প্লেসমেন্ট শেয়ার বা ইউনিট হস্তান্তর হতে অর্জিত নয়;
(২৪) ৩০ জুন ২০৩০ তারিখের মধ্যে কোনো Ocean going ship being Bangladeshi flag carrier কর্তৃক অর্জিত ব্যবসার আয় ফরেন রেমিট্যান্স সংক্রান্ত বিধানাবলি অনুসরণ করে বাংলাদেশে আনীত হলে অনুরূপ আয়।
করমুক্ত আয়সমূহ করদাতার মোট আয়ে অন্তর্ভুক্ত হবে না। এটি রিটার্নে করমুক্ত আয়ের কলামে প্রদর্শন করতে হবে।
পঞ্চম ভাগ
মোট আয় নিরূপণ ও কর পরিগণনার উদাহরণ
বিভিন্ন শ্রেণির স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার মোট আয় ও করদায়ের পরিমাণ কিভাবে পরিগণনা করা হবে তা কয়েকটি উদাহরণের মাধ্যমে নিম্নে উপস্থাপন করা হলো:
১। সরকারি বেতন আদেশভুক্ত কর্মচারীদের আয় এবং কর পরিগণনা:
জনাব মাহরুস হাসান মাহাদ বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের একজন কর্মচারী। ৩০ জুন ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত আয়বর্ষে তিনি নিম্নোক্ত হারে বেতন ভাতাদি পেয়েছেন:
মাসিক মূল বেতন ২৬,০০০
উৎসব বোনাস ২টি (২৬,০০০ × ২) ৫২,০০০
চিকিৎসা ভাতা ১,৫০০
শিক্ষা সহায়ক ভাতা ৫০০
বাংলা নববর্ষ ভাতা ৪,৪০০
তিনি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত বাসায় থাকেন। ভবিষ্য তহবিলে তিনি প্রতি মাসে ৩,২০০ টাকা জমা রাখেন। হিসাবরক্ষণ অফিস হতে প্রাপ্ত প্রত্যয়নপত্র হতে দেখা যায় যে, ৩০ জুন ২০২৪ তারিখে ভবিষ্য তহবিলে অর্জিত সুদের পরিমাণ ছিল ২৯,৫০০ টাকা। কল্যাণ তহবিলে ও গোষ্ঠী বিমা তহবিলে চাঁদা প্রদান বাবদ প্রতি মাসে বেতন হতে কর্তন ছিল যথাক্রমে ১৫০ ও ১০০ টাকা।
২০২৪-২০২৫ করবর্ষে জনাব মাহরুস হাসান মাহাদ এর মোট আয় এবং করদায় নিম্নে পরিগণনা করা হলো:
বেতন খাতে আয়:
মূল বেতন (২৬,০০০ × ১২ মাস) ৩,১২,০০০
উৎসব বোনাস (২৬,০০০ × ২) ৫২,০০০
মোট আয় ৩,৬৪,০০০
* জনাব মাহাদের ৩০ জুন ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত আয়বছরে যে চিকিৎসা ভাতা, শিক্ষা সহায়ক ভাতা ও বাংলা নববর্ষ ভাতা পেয়েছেন তা তার জন্য প্রযোজ্য চাকরি (ব্যাংক, বিমা ও ফাইন্যান্স কোম্পানি) (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৫ এর অন্তর্ভুক্ত। ফলে এসব ভাতার জন্য তাকে আয়কর প্রদান করতে হবে না।
করদায় পরিগণনা
প্রথম ৩,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত ‘শূন্য’ হার শূন্য
অবশিষ্ট ১৪,০০০ টাকার উপর ৫% ৭০০
মোট আয়ের উপর প্রযোজ্য কর ৭০০
বিনিয়োগ জনিত কর রেয়াত পরিগণনা
বিনিয়োগের পরিমাণ
(১) ভবিষ্য তহবিলে চাঁদা (৩,২০০ × ১২) ৩৮,৪০০
(২) কল্যাণ তহবিলে চাঁদা (১৫০× ১২) ১,৮০০
(৩) গোষ্ঠী বিমা তহবিলে চাঁদা (১০০ × ১২) ১,২০০
মোট বিনিয়োগ ৪১,৪০০
রেয়াতের পরিমাণ নির্ধারণ:
(ক) | মোট অনুমোদনযোগ্য বিনিয়োগ ৪১,৪০০ টাকা × ০.১৫ | ৬,২১০ |
(খ) | মোট আয় ৩,৬৪,০০০ টাকা × ০.০৩ | ১০,৯২০ |
(গ) | ১০,০০,০০০ | |
কর রেয়াতের পরিমাণ হবে [(ক) বা (খ) বা (গ), এ তিনটির মধ্যে যেটি কম] | ৬,২১০ |
করদাতার মোট কর রেয়াতের পরিমাণ হবে ৬,২১০ টাকা।
মোট আয়ের উপর প্রযোজ্য কর ৭০০
কর রেয়াত ৬,২১০
প্রদেয় কর ৫,০০০
যেহেতু, মোট আয়ের উপর প্রযোজ্য কর ৭০০ টাকা এবং আইনানুগ রেয়াতের পরিমাণ ৬,২১০ টাকা। এইক্ষেত্রে, করদাতা কোনো প্রকার কর রেয়াত প্রাপ্য হবেন না। কর রেয়াতের পরিমাণ কখনোই করদায়ের বেশি হবে না। অর্থাৎ, উপরের কর পরিগণনা অনুযায়ী প্রদেয় কর ঋণাত্মক হলেও করদাতার করমুক্ত সীমার অতিরিক্ত আয় থাকায় এক্ষেত্রে করদাতার অবস্থান ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় হলে ন্যূনতম ৫,০০০ টাকা, অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন এলাকায় হলে ন্যূনতম ৪,০০০ টাকা এবং সিটি কর্পোরেশন ব্যতীত অন্যান্য এলাকায় হলে ৩,০০০ টাকা আয়কর প্রদান করতে হবে।
একই আয়, অর্থাৎ যদি কোনো প্রতিবন্ধী অথবা গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার মোট আয় ৩,৬৪,০০০ টাকা হয়, তবে তাদের ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা যথাক্রমে ৪,৭৫,০০০ টাকা এবং ৫,০০,০০০ টাকা হওয়ায় তাদেরকে কোনো কর প্রদান করতে হবে না। এছাড়াও একজন মহিলা করদাতার যদি মোট আয় ৩,৬৪,০০০ টাকা হয়, যার একটি প্রতিবন্ধী সন্তান রয়েছে এবং যার স্বামী প্রতিবন্ধী সন্তানের জন্য কোনো অব্যাহতির সীমা গ্রহণ করেন না, তার ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা ৪,৫০,০০০ টাকা হওয়ায় তাকেও কোনো কর প্রদান করতে হবে না।
২। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত করদাতার আয় এবং কর পরিগণনা
(ক) বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মিজ্ রহিমা ২০২৪-২০২৫ করবর্ষে নিম্নরূপ বেতন ও ভাতা পেয়েছেন:
ক্রম | খাত | পরিমাণ (ট) |
(ক) | মাসিক মূল বেতন | ২৯,৩০০ |
(খ) | ২টি উৎসব বোনাস (২৯,৩০০ × ২) | ৫৮,৬০০ |
(গ) | চিকিৎসা ভাতা | ৩,০০০ |
(ঘ) | আপ্যায়ন ভাতা | ৫০০ |
(ঙ) | বাড়ী ভাড়া ভাতা | ১০,৭২০ |
এছাড়া মিজ্ রহিমার নিম্নোক্ত সুবিধাদি, আয়, উৎসে কর কর্তন, সম্পদ ও বিনিয়োগ রয়েছে-
১. ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য তিনি অফিস হতে ১৫০০ সিসি একটি গাড়ী বরাদ্দ পেয়েছেন।
২. তার গৃহ সম্পত্তি ভাড়া হতে ১,২০,০০০ টাকা, কৃষি খাতে ৫০,০০০ টাকা, আইসিবি মিউচ্যুয়াল ফান্ড হতে লভ্যাংশ প্রাপ্তি ১,৫০,০০০ টাকা এবং ব্যাংক সুদ খাতে ১,১০,০০০ টাকা আয় রয়েছে।
৩. লভ্যাংশ ও ব্যাংক সুদের উপর ১০% হারে উৎসে আয়কর কর্তন করা হয়েছে।
৪. ৩০ জুন ২০২৪ তারিখে তার নীট সম্পদের পরিমাণ ২০,৩০,০০,০০০ টাকা।
৫. তিনি ১,০০,০০০ টাকার তিন বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেছেন।
৬. জীবন বিমার প্রিমিয়াম বাবদ ৬০,০০০ টাকা দিয়েছেন।
মিজ্ রহিমার মোট আয় নিম্নরূপভাবে নিরূপণ করতে হবে:
(ক) চাকরি হইতে আয়:
মূল বেতন (২৯,৩০০ × ১২) ৩,৫১,৬০০
উৎসব বোনাস (২৯,৩০০ × ২) ৫৮,৬০০
চিকিৎসা ভাতা (৩,০০০× ১২) ৩৬,০০০
আপ্যায়ন ভাতা (৩০০ × ১২) ৩,৬০০
বাড়ী ভাড়া ভাতা (১০,৭২০ × ১২) ১,২৮,৬৪০
মোটরগাড়ি সুবিধা (১০,০০০ × ১২)
(২৫০০ সিসি পর্যন্ত মাসিক ১০,০০০ টাকা হারে) = ১,২০,০০০
চাকরি হইতে মোট আয় = ৬,৯৮,৪৪০
বাদ: চাকরি হইতে আয় এর এক-তৃতীয়াংশ
বা ৪,৫০,০০০ টাকা যেটি কম = ২,৩২,৮১৩
চাকরি হইতে আয় = ৪,৬৫,৬২৭
(খ) ভাড়া হইতে আয়: ১,২০,০০০
(গ) কৃষি হইতে আয়: ৬০,০০০
(ঘ) আর্থিক পরিসম্পদ হইতে আয়
(অ) আইসিবি মিউচ্যুয়াল ফান্ড হতে লভ্যাংশ ১,৫০,০০০
(আ) ব্যাংক সুদ আয় ১,১০,০০০
২,৬০,০০০
মোট আয় ৯,০৫,৬২৭
১) নিয়মিত উৎসের আয়ের জন্য করদায়:
নিয়মিত উৎসের (চাকুরি, ভাড়া ও কৃষি হতে) আয় ৬,৪৫,৬২৭ টাকা
নিয়মিত উৎসের জন্য করদায় ১৯,৫৬৩ টাকা।
২) নিয়মিত উৎসের আয়ের জন্য ও ন্যূনতম কর প্রযোজ্য হয় এরূপ (লভ্যাংশ ও ব্যাংক সুদ) আয়ের জন্য করদায়:
নিয়মিত উৎসের আয় ৬,৪৫,৬২৭
ন্যূনতম কর প্রযোজ্য হয় এরূপ আয় ২,৬০,০০০
দুইটি উৎসের আয়ের সমষ্টি = ৯,০৫,৬২৭
৯,০৫,৬২৭ টাকার উপর প্রযোজ্য আয়কর ৪৫,৮৪৪
বাদ: নিয়মিত উৎসের আয়ের উপর প্রযোজ্য আয়কর ১৯,৫৬৩
লভ্যাংশ ও ব্যাংক সুদ আয়ের জন্য নিয়মিত করদায় ২৬,২৮১
লভ্যাংশ ও ব্যাংক সুদের উপর ১০% হারে উৎসে কর্তিত কর ২৬,০০০ টাকা।
ধারা ১৬৩ অনুযায়ী,
লভ্যাংশ ও ব্যাংক সুদের জন্য ন্যূনতম কর হবে ২৬,২৮১ টাকা।
৩) এক্ষেত্রে, ২০২৪-২০২৫ করবর্ষে মিজ রহিমার মোট করদায় হবে
(১৯,৫৬৩+২৬,২৮১) = ৪৫,৮৪৪ টাকা।
বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত পরিগণনা:
(ক) সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ১,০০,০০০ টাকা
(খ) জীবন বিমার প্রিমিয়াম প্রদান ৬০,০০০ টাকা
মোট ১,৬০,০০০ টাকা
কর রেয়াতের পরিমাণ:
(ক) | মোট আয় ৯,০৫,৬২৭ টাকা – ন্যূনতম কর এর আওতার আয় ২,৬০,০০০ টাকা = ৬,৪৫,৬২৭ টাকা × ০.০৩ | ১৯,৩৬৯ |
(খ) | মোট অনুমোদনযোগ্য বিনিয়োগ ১,৬০,০০০ টাকা × ০.১৫ | ২৪,০০০ |
(গ) | ১০,০০,০০০ | |
কর রেয়াতের পরিমাণ হবে [(ক) বা (খ) বা (গ), এ তিনটির মধ্যে যেটি কম] | ১৯,৩৬৯ |
কর রেয়াতের পরিমাণ = ১৯,৩৬৯ টাকা।
মোট আরোপযোগ্য কর ৪৫,৮৪৪
বাদ: কর রেয়াত ১৯,৩৬৯
প্রদেয় কর ২৬,৪৭৫
সারচার্জের পরিমাণ:
করদাতার নীট সম্পদের পরিমাণ ২০,৩০,০০,০০০ টাকা হওয়ায় প্রদেয় আয়করের ৩০% হারে সারচার্জ প্রযোজ্য হবে। সারচার্জের পরিমাণ দাঁড়ায় (২৬,৪৭৫ টাকার ৩০%) ৭,৯৪৩ টাকা। ৭,৯৪৩
ফলে মোট প্রদেয় কর ৩৪,৪১৮
মিজ্ রহিমার মোট প্রদেয় কর (৩৪,৪১৮- ২৬,০০০) টাকা বা ৮,৪১৮ টাকা
(খ) ২০২৩-২০২৪ আয়বর্ষে মিজ সঞ্চিতা শুভ্রার চাকরি হইতে আয়ের পরিমাণ ৭,০০,০০৫ টাকা। সঞ্চয়পত্রের মুনাফা রয়েছে ৫,০০,০০০ টাকা। তিনি ঢাকার বনানী আবাসিক এলাকায় ০.২৫ কাঠা ভূমি দলিলে উল্লেখিত মূল্য ৭৫,০০,০০০ টাকায় বিক্রি করেন। মিজ শুভ্রার রিটার্নে উক্ত জমির অর্জনমূল্য প্রদর্শিত রয়েছে ৫,০০,০০০ টাকা। ব্যাংক সুদ আয় রয়েছে ৩,৫০,০০০ টাকা। চাকরি হইতে আয়ের উৎসে ৫,০০০ টাকা কর কর্তন করা হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রে করদাতার আয়ের বিপরীতে প্রযোজ্য হারে উৎসে কর কর্তন করা হয়েছে। তিনি এ আয়বর্ষে রেয়াতযোগ্য কোনো বিনিয়োগ করেন নি। করদাতা ৮,১০০ বর্গফুট আয়তনের একটি গৃহ সম্পত্তির মালিক। ২০২৪-২০২৫ করবর্ষে মিজ শুভ্রার করযোগ্য আয় ও করদায় নিরুপণ করতে হবে।
কর নির্ধারণ:
(ক) | চাকরি হইতে আয়
[চাকরি হতে গ্রস প্রাপ্তি ৭,০০,০০৫ টাকা; ষষ্ঠ তফসিলের অংশ-১ এর দফা (২৭) অনুযায়ী ৭,০০,০০৫ টাকার এক-তৃতীয়াংশ বা ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা করমুক্ত; ফলে চাকরি হইতে করযোগ্য আয় হবে ৪,৬৬,৬৭০] |
৪,৬৬,৬৭০ | |
(খ) | আর্থিক পরিসম্পদ হইতে আয়
[৫,০০,০০০ + ৩,৫০,০০০] |
৮,৫০,০০০ | |
(গ) | মূলধনি আয়
[৭৫,০০,০০০ – ৫,০০,০০০] |
৭০,০০,০০০ |
|
মোট আয় | ৮৩,১৬,৬৭০ | ||
কর পরিগণনা: | |||
(ক) | এখানে মিজ শুভ্রার নিয়মিত উৎসের আয় কেবল মাত্র চাকরি হইতে অর্জিত আয়। এর বিপরীতে করদায়- |
৩,৩৩৩ |
|
(খ) | চাকরি হইতে আয় এবং ব্যাংক সুদ আয় চূড়ান্ত করদায় নয় বিধায় এই দুই খাতের আয় (৪,৬৬,৬৭০ + ৩,৫০,০০০) টাকা বা ৮,১৬,৬৭০ উপর করদায়- |
৩৬,৬৬৭ |
|
চাকরি হইতে আয় এবং ব্যাংক সুদ আয়ের বিপরীতে ধারা ১৬৩(৪) অনুযায়ী কর নিরুপণ: | |||
(১) | ব্যাংক সুদের উপর করদাতার করদায় (৩৬,৬৬৭ – ৩,৩৩৩) টাকা বা ৩৩,৩৩৪ টাকা। ব্যাংক সুদের বিপরীতে কর্তিত করের পরিমাণ ৩৫,০০০ টাকা। তাই ধারা ১৬৩(৩) অনুযায়ী চাকরি হইতে আয় এবং ব্যাংক সুদ আয়ের প্রক্ষিতে করদাতার করদায় হবে (৩,৩৩৩ + ৩৫,০০০) টাকা বা ৩৮,৩৩৩ টাকা | ৩৮,৩৩৩ | |
চূড়ান্ত করদায় নিরুপণ: | |||
(২) | সঞ্চয়পত্রের মুনাফা আয় এবং ভূমি হস্তান্তর হতে অর্জিত মূলধনি আয়ের বিপরীতে উৎসে কর্তিত কর স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার জন্য চূড়ান্ত করদায় হিসেবে বিবেচিত। ফলে এই দুই উৎসের বিপরীতে মোট করের পরিমাণ (৫,০০,০০০ × ১০% + ৭৫,০০,০০০ × ৪%) টাকা বা ৩,৫০,০০০ টাকা | ৩,৫০,০০০ | |
করের পরিমাণ [(১)+(২)] | ৩,৮৮,৩৩৩ | ||
সারচার্জ নির্ধারণ | |||
করদাতা ৮,১০০ বর্গফুট আয়তনে গৃহসম্পত্তি থাকায় করদাতাকে ৩,৮৮,৩৩৩ টাকার উপর ১০% |
৩৮,৮৩৩ |
||
মোট প্রদেয় করের পরিমাণ | ৪,২৭,১৬৬ | ||
উৎসে কর্তিত করের ক্রেডিট | |||
১। | চাকরি হইতে আয় | ৫,০০০ | |
২। | ব্যাংক সুদ হতে আয়ের বিপরীতে | ৩৫,০০০ | |
৩। | সঞ্চয়পত্রের মুনাফার বিপরীতে | ৫০,০০০ | |
৪। | ভূমি হস্তান্তরের বিপরীতে | ৩,০০,০০০ | |
(৩,৯০,০০০) | |||
রিটার্ন দাখিলের সময় আয়কর আইনের ১৭৩ ধারানুযায়ী প্রদেয় কর | ৩৭,১৬৬ |
৩। একজন শিক্ষকের আয় এবং কর পরিগণনা
জনাব মিনহাজ আহমেদ বেসরকারি ইংরেজী মাধ্যমের একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তার একজন প্রতিবন্ধী সন্তান রয়েছে। তার স্ত্রী করদাতা নন। ১ জুলাই ২০২৩ হতে ৩০ জুন ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে তার আয় ছিল নিম্নরূপঃ
বেতন খাত: | |
মাসিক মূল বেতন | ৩০,০০০ |
বাড়ী ভাড়া ভাতা | ১৫,০০০ |
চিকিৎসা ভাতা | ১,০০০ |
উৎসব বোনাস- | দু’টি মূল বেতনের সমান। |
জনাব মিনহাজ আহমেদ টিউশনী থেকেও উপার্জন করে থাকেন। তিনি মাসে মোট ০৬ (ছয়) ব্যাচে ছাত্র পড়ান। প্রতি ব্যাচে ছাত্র সংখ্যা ০৬ জন। প্রতি ছাত্র থেকে তিনি ৪,০০০ টাকা মাসিক সম্মানি গ্রহণ করেন। তিনি নিজের বাসাতে ছাত্র পড়ান।
তিনি আয়বর্ষে ২,০০,০০০ টাকার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেছেন। ৩০ জুন ২০২৪ তারিখে করদাতার নীট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৪,৩০,০০,০০০ টাকা।
২০২৪-২০২৫ করবর্ষে করদাতার মোট আয় ও প্রদেয় করের পরিমাণ নিম্নরূপ:
চাকরি হইতে আয়:
মাসিক মূল বেতন (৩০,০০০× ১২) | ৩,৬০,০০০ | ||
বাড়ী ভাড়া ভাতা (১৫,০০০ × ১২) | ১,৮০,০০০ | ||
চিকিৎসা ভাতা (১,০০০× ১২) | ১২,০০০ | ||
উৎসব বোনাস (৩০,০০০× ২) | ৬০,০০০ | ||
মোট = | ৬,১২,০০০ | ||
বাদ: চাকরি হইতে আয় এর এক-তৃতীয়াংশ বা ৪,৫০,০০০ টাকা যেটি কম =
চাকরি হইতে আয়
অন্যান্য উৎস হইতে আয়: |
২,০৪,০০০ ৪,০৮,০০০ |
||
টিউশনী থেকে প্রাপ্ত আয় (৬ ব্যাচ × ৬ জন × ৪,০০০ × ১২ মাস) |
১৭,২৮,০০০ |
||
মোট আয় = | ২১,৩৬,০০০ | ||
করদায় পরিগণনা | |||
(ক) প্রথম ৪,০০,০০০ টাকা* পর্যন্ত মোট আয়ের উপর | শূন্য | ||
(খ) পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর | ৫% | ৫,০০০ | |
(গ) পরবর্তী ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর | ১০% | ৪০,০০০ | |
(ঘ) পরবর্তী ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর | ১৫% | ৭৫,০০০ | |
(ঙ) পরবর্তী ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর | ২০% | ১,০০,০০০ | |
(চ) অবশিষ্ট ২,৩৬,০০০ টাকা মোট আয়ের উপর | ২৫% | ৫৯,০০০ | |
প্রদেয় কর = | ২,৭৯,০০০ | ||
*প্রতিবন্ধী সন্তানের পিতা হিসেবে করমুক্ত আয় সীমা (৩,৫০,০০০ + ৫০,০০০) = ৪,০০,০০০ টাকা।
কর রেয়াতের পরিমাণ:
(ক) | মোট অনুমোদনযোগ্য বিনিয়োগ ২,০০,০০০ টাকা × ০.১৫ | ৩০,০০০ |
(খ) | মোট আয় ২১,৩৬,০০০ টাকা × ০.০৩ | ৬৪,০৮০ |
(গ) | ১০,০০,০০০ | |
কর রেয়াতের পরিমাণ হবে [(ক) বা (খ) বা (গ), এ তিনটির মধ্যে যেটি কম] | ৩০,০০০ |
কর রেয়াতের পরিমাণ হবে ৩০,০০০ টাকা।
প্রদেয় কর:
ফলে প্রদেয় করের পরিমাণ হবে = ২,৭৯,০০০ – ৩০,০০০ = ২,৪৯,০০০ টাকা।
করদাতার নীট সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা যা সারচার্জ আরোপের লক্ষ্যে নীট সম্পদের সর্বোচ্চ সীমা ৪ কোটি টাকার অধিক হওয়ায় প্রদেয় কর ২,৪৯,০০০ টাকার উপর সারচার্জ বাবদ ২,৪৯,০০০ × ১০% = ২৪,৯০০ টাকা প্রদেয় হবে। অর্থাৎ আয়কর ও সারচার্জ বাবদ করদাতার মোট প্রদেয় কর হবে ২,৪৯,০০০ টাকা + ২৪,৯০০ টাকা = ২,৭৩,৯০০ টাকা।
৪। একজন শিল্পীর আয় এবং কর পরিগণনা
মিজ্ নামিরা নুজাইমা একজন কণ্ঠশিল্পী। তার নিজস্ব একটি গানের দল রয়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি তার দল নিয়ে গান পরিবেশনের মাধ্যমে আয় করে থাকেন। ১ জুলাই ২০২৩ হতে ৩০ জুন ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে তার আয় ও ব্যয়ের পরিসংখ্যান ছিল এ রকম:
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে প্রাপ্তি ছিল ১০,০০,০০০ টাকা।
তার নিজস্ব দলে ৩জন সহশিল্পী, ৩ জন যন্ত্রশিল্পী, ২ জন তবলচী রয়েছে। তাদেরকে বেতন বাবদ প্রদান করা হয়েছিল:
বেতন খরচ: | ||
৩ জন সহশিল্পী | ৩ × ৬,০০০ × ১২ মাস | ২,১৬,০০০ |
৩ জন যন্ত্রশিল্পী | ৩ × ৫,০০০ × ১২ মাস | ১,৮০,০০০ |
২ জন তবলচী | ২ × ৩,০০০ × ১২ মাস | ৭২,০০০ |
শিল্পীদের ড্রেস ও যাতায়াত বাবদ খরচ ছিল যথাক্রমে ১৫,০০০ টাকা ও ২,০০০ টাকা।
২০২৪-২০২৫ করবর্ষে মিজ্ নামিরার মোট আয় ও প্রদেয় আয়কর হবে নিম্নরূপ:
সংগীত পরিবেশন হতে গ্রস প্রাপ্তি- | ১০,০০,০০০ | ||
বাদ: ব্যয়সমূহ (যাচাইযোগ্য প্রমাণাদি দাখিল সাপেক্ষে) | |||
১। বেতন বাবদ: | |||
সহশিল্পী | ২,১৬,০০০ | ||
যন্ত্রশিল্পী | ১,৮০,০০০ | ||
তবলচী | ৭২,০০০ | ||
৪,৬৮,০০০ | |||
২। ড্রেস ও যাতায়াত — | ১৭,০০০ | ||
৪,৮৫,০০০ | |||
মোট আয় = | ৫,১৫,০০০ |
করদায় পরিগণনা:
প্রথম ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর | শূন্য |
পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর ৫% হারে | ৫,০০০ |
অবশিষ্ট ১৫,০০০ টাকার উপর ১০% হারে | ১,৫০০ |
মোট প্রদেয় কর | ৬,৫০০ |
৫। একজন চিকিৎসকের আয় এবং কর পরিগণনা
জনাব ফাহাদ আল করিম একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক। তিনি ৩০ জুন ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত আয়বর্ষে হাসপাতাল থেকে নিম্নরূপ বেতন ভাতা পেয়েছেন:
বেতন খাত: | |
মূল বেতন (৫০,০০০ × ১২) | ৬,০০,০০০ |
বাড়ী ভাড়া ভাতা | ৩,০০,০০০ |
চিকিৎসা ভাতা (২,০০০× ১২) | ২৪,০০০ |
উৎসব ভাতা দু’টি মূল বেতনের সমপরিমাণ | ১,০০,০০০ |
স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে আয়বর্ষে তিনি মাসে ৫,০০০ টাকা চাঁদা দিয়েছেন। তার নিয়োগকর্তাও সমপরিমাণ চাঁদা জমা দিয়েছেন।
জনাব ফাহাদ প্রাইভেট প্র্যাকটিস করে থাকেন। তিনি প্রতিদিন গড়ে ১০ জন নতুন রোগী ও ৩০ জন পুরাতন রোগী দেখেন। নতুন রোগীর ফি ৫০০ টাকা ও পুরাতন রোগীর ফি ৩০০ টাকা। তিনি বছরে ৩০০ দিন রোগী দেখেন। করদাতা কোনো খাতাপত্র সংরক্ষণ করেন না।
তিনি আয়বর্ষে একটি ব্যাংকের ডিপোজিট পেনশন স্কিমে মাসিক ৬,০০০ টাকা ডিপিএস হিসেবে জমা প্রদান করেছেন। তিনি স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ে ১০,০০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এছাড়া, তিনি ৫,০০,০০০ টাকার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেছেন।
২০২৪-২০২৫ করবর্ষে জনাব জনাব ফাহাদ আল করিমের মোট আয় ও আয়কর পরিগণনা নীচে দেখানো হল:
বেতন আয়:
বার্ষিক মূল বেতন | ৬,০০,০০০ | ||
বাড়ী ভাড়া ভাতা | ৩,০০,০০০ | ||
উৎসব ভাতা | ১,০০,০০০ | ||
চিকিৎসা ভাতা | ২৪,০০০ | ||
স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে নিয়োগকর্তার চাঁদা (৫,০০০ × ১২ মাস) |
৬০,০০০ |
||
চাকরি হইতে আয় | ১০,৮৪,০০০ | ||
বাদঃ চাকরি হইতে মোট আয় এর এক-তৃতীয়াংশ বা ৪,৫০,০০০ যেটি কম |
|
৩,৬১,৩৩৩ |
|
বেতন খাতে আয় | ৭,২২,৬৬৭ |
ব্যবসা হইতে আয়:
নতুন রোগী
(১০ × ৩০০ × ৫০০) |
১৫,০০,০০০ |
||
পুরাতন রোগী
(৩০ × ৩০০ × ৩০০) |
২৭,০০,০০০ |
||
মোট প্রাপ্তি | ৪২,০০,০০০ | ||
বাদ: দাবীকৃত খরচ | ১৪,০০,০০০ | ||
ব্যবসা হইতে নীট আয় | ২৮,০০,০০০ | ||
মোট আয় | ৩৫,২২,৬৬৭ |
করদায় পরিগণনা
(ক) প্রথম ৩,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর | শূন্য |
(খ) পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর ৫% | ৫,০০০ |
(গ) পরবর্তী ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর ১০% | ৪০,০০০ |
(ঘ) পরবর্তী ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর ১৫% | ৭৫,০০০ |
(ঙ) পরবর্তী ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর ২০% | ১,০০,০০০ |
(চ) অবশিষ্ট ১৬,৭২,৬৬৭ টাকা আয়ের উপর ২৫% | ৪,১৮,১৬৭ |
প্রদেয় কর | ৬,৩৮,১৬৭ |
কর রেয়াত:
রেয়াতযোগ্য বিনিয়োগের পরিমাণ:
স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে নিজের ও নিয়োগকর্তার বার্ষিক চাঁদা
৫,০০০× ১২ × ২ |
১,২০,০০০ |
ডিপিএস -এ বার্ষিক জমা (১১,০০০× ১২) = ১,৩২,০০০ টাকা,
কিন্তু বিনিয়োগের অনুমোদনযোগ্য সীমা ১,২০,০০০ টাকা |
১,২০,০০০ |
সঞ্চয়পত্র ক্রয় | ৫,০০,০০০ |
ষ্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ | ১০,০০,০০০ |
মোট প্রকৃত বিনিয়োগ | ১৭,৪০,০০০ |
কর রেয়াতের পরিমাণ:
(ক) | মোট অনুমোদনযোগ্য বিনিয়োগ ১৭,৪০,০০০ টাকা × ০.১৫ | ২,৬১,০০০ |
(খ) | মোট আয়ের ৩৫,২২,৬৬৭ টাকা × ০.০৩ | ১,০৫,৬৮০ |
(গ) | ১০,০০,০০০ | |
কর রেয়াতের পরিমাণ হবে (ক) বা (খ) বা (গ), এ তিনটির মধ্যে যেটি কম | ১,০৫,৬৮০ |
কর রেয়াতের পরিমাণ:
করদাতার মোট কর রেয়াতের পরিমাণ হবে ১,০৫,৬৮০ টাকা।
ফলে জনাব ফাহাদের নীট প্রদেয় করের পরিমাণ হবে (৬,৩৮,১৬৭ – ১,০৫,৬৮০) = ৫,৩২,৪৮৭ টাকা।
৬। একজন ব্যবসায়ীর আয় এবং কর পরিগণনা
(ক) জনাব রজিন বাবু মাহি একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক। ৩০ জুন ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত আয়বর্ষের হিসাব বিবরণীতে তিনি নিম্নরূপ তথ্য প্রদান করেন:
বিক্রয় | ১,২০,০০,০০০ |
গ্রস মুনাফা | ১৮,০০,০০০ |
লাভ-ক্ষতি হিসাবের বিভিন্ন খাতে খরচ দাবী | ৯,৫০,০০০ |
নীট মুনাফা | ৮,৫০,০০০ |
এ বছরে তিনি ৩০,০০০ টাকা অগ্রিম আয়কর পরিশোধ করেছেন এবং ১,২০,০০০ টাকার নতুন সঞ্চয়পত্র ক্রয় করেছেন।
৩০ জুন ২০২৪ তারিখে করদাতার বয়স ছিল ৬৬ বছর ২ মাস।
২০২৪-২০২৫ করবর্ষে করদাতার ৮,৫০,০০০ টাকা মোট আয়ের উপর প্রদেয় করের পরিমাণ নিম্নরূপে পরিগণনা করা হলো:
করদায় পরিগণনা | |
(ক) প্রথম ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর | শূন্য* |
(খ) পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকার উপর ৫% | ৫,০০০ |
(গ) পরবর্তী ৩,৫০,০০০ টাকার উপর ১০% | ৩৫,০০০ |
মোট আয়ের উপর আয়কর | ৪০,০০০ |
*করদাতার বয়স ৬৫ বছরের উর্ধ্বে হওয়ায় করমুক্ত আয়ের সীমা ৪,০০,০০০ টাকা।
কর রেয়াত
বিনিয়োগ: | |
সঞ্চয়পত্র ক্রয় | ১,২০,০০০ |
কর রেয়াতের পরিমাণ:
(ক) | মোট আয় ৮,৫০,০০০ × ০.০৩ | ২৫,৫০০ |
(খ) | মোট অনুমোদনযোগ্য বিনিয়োগ ১,২০,০০০ × ০.১৫ | ১৮,০০০ |
(গ) | ১০,০০,০০০ | |
কর রেয়াতের পরিমাণ হবে (ক) বা (খ) বা (গ), এ তিনটির মধ্যে যেটি কম | ১৮,০০০ |
কর রেয়াতের পরিমাণ = ১৮,০০০ টাকা
প্রদেয় কর
মোট আয়ের উপর আয়কর ৪০,০০০
কর রেয়াত ১৮,০০০
প্রদেয় কর ২২,০০০
বাদ: অগ্রিম আয়কর পরিশোধ ৩০,০০০
নীট প্রদেয় কর: ফেরতযোগ্য বা পরবর্তীতে সমন্বয়যোগ্য কর (৮,০০০)
(খ) ধরা যাক, জনাব মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন ৩০ জুন ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত আয়বর্ষে মোট ২০,০০,০০০ টাকার পণ্য আমদানি করে আমদানি পর্যায়ে ৫% হারে মোট ১,০০,০০০ টাকা উৎসে কর প্রদান করেছেন। করদাতার উক্ত ব্যবসা খাতে আয়ের পরিমাণ ৬,০০,০০০ টাকা। এছাড়া, উক্ত আয়বর্ষে করদাতার গৃহ-সম্পত্তি হতে আয় ছিল ৪,০০,০০০ টাকা। জনাব কামাল ২০২৪-২০২৫ করবর্ষে করদাতার মোট আয় ও করদায়ের পরিমাণ হবে নিম্নরূপ-
১. নিয়মিত উৎসের (গৃহ-সম্পত্তি হতে) আয়: ৪,০০,০০০ টাকা
নিয়মিত উৎসের জন্য করদায়: ২,৫০০ টাকা।
২. নিয়মিত উৎসের ও আমদানি ব্যবসায়ের জন্য করদায়:
নিয়মিত উৎসের (গৃহ-সম্পত্তি হতে) আয়: ৪,০০,০০০
নিয়মিত পদ্ধতিতে পরিগণনাকৃত
আমদানি ব্যবসা খাতের আয়: ৬,০০,০০০
দুইটি উৎসের আয়ের সমষ্টি = ১০,০০,০০০
১০,০০,০০০ টাকার উপর প্রযোজ্য আয়কর ৬৭,৫০০
বাদ: নিয়মিত উৎসের আয়ের উপর প্রযোজ্য আয়কর ২,৫০০
আমদানি ব্যবসায়ের জন্য নিয়মিত করদায় ৬৫,০০০
আমদানি ব্যবসায়ের জন্য উৎসে কর্তিত কর ১,০০,০০০ টাকা।
ফলে, ধারা ১৬৩ অনুযায়ী আমদানি ব্যবসায়ের জন্য ন্যূনতম কর হবে ১,০০,০০০ টাকা।
৩. এক্ষেত্রে, ২০২৪-২০২৫ করবর্ষে জনাব কামালের মোট আয় হবে
(৪,০০,০০০ + ৬,০০,০০০) = ১০,০০,০০০ টাকা
এবং করদায় হবে (২,৫০০ + ১,০০,০০০) = ১,০২,৫০০ টাকা।
(গ) জনাব শিপন শাহ ৩০ জুন ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত আয়বর্ষে মোট ২৪,০০,০০০ টাকার পণ্য আমদানি করে আমদানি পর্যায়ে ৫% হারে মোট ১,২০,০০০ টাকা উৎসে কর প্রদান করেছেন। করদাতার উক্ত ব্যবসা খাতে আয়ের পরিমাণ ১০,০০,০০০ টাকা। এছাড়া, উক্ত আয়বর্ষে করদাতার গৃহ-সম্পত্তি হতে আয় ছিল ৪,৫০,০০০ টাকা এবং সঞ্চয়পত্রের সুদ আয় ছিল ৪,০০,০০০ টাকা, যার উপর ৫% হারে উৎসে ২০,০০০ আয়কর কর্তন করা হয়েছে। জনাব শিপনের মোট আয় ও করদায়ের পরিমাণ হবে নিম্নরূপ-
১. নিয়মিত উৎসের (গৃহ-সম্পত্তি হতে) আয়: ৪,৫০,০০০ টাকা
নিয়মিত উৎসের জন্য করদায়: ৫,০০০ টাকা।
২. নিয়মিত উৎসের ও আমদানি ব্যবসায়ের জন্য করদায়:
নিয়মিত উৎসের (গৃহ-সম্পত্তি হতে) আয়: ৪,৫০,০০০
নিয়মিত পদ্ধতিতে পরিগণনাকৃত আমদানি
ব্যবসা খাতের আয়: ১০,০০,০০০ দুইটি উৎসের আয়ের সমষ্টি ১৪,৫০,০০০
১৪,৫০,০০০ টাকার উপর প্রযোজ্য আয়কর ১,৪০,০০০
বাদ: নিয়মিত উৎসের আয়ের উপর প্রযোজ্য আয়কর ৫,০০০
আমদানি ব্যবসায়ের জন্য নিয়মিত করদায় ১,৩৫,০০০
আমদানি ব্যবসায়ের জন্য উৎসে কর্তিত কর ১,২০,০০০ টাকা যা নিয়মিত করদায় অপেক্ষা কম।
ফলে, ধারা ১৬৩ অনুযায়ী আমদানি ব্যবসায়ের জন্য ন্যূনতম কর হবে ১,৩৫,০০০ টাকা।
৩. সঞ্চয়পত্রের সুদের উপর কর: ২০,০০০
৪. ২০২৪-২০২৫ করবর্ষে জনাব শিপনের মোট আয় হবে
(৪,৫০,০০০ + ১০,০০,০০০+ ৪,০০,০০০) = ১৮,৫০,০০০ টাকা
এবং করদায় হবে
(৫,০০০ + ১,৩৫,০০০+ ২০,০০০) = ১,৬০,০০০ টাকা।