Skip to content

চাকরি হইতে আয়

    আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ৩২৩৪ অনুযায়ী চাকরি হইতে আয় নিরুপণ করতে হবে। চাকরি হতে আয় রয়েছে এমন করদাতার জন্য ষষ্ঠ তফসিলের অংশ ১ এর দফা (১৪) এবং দফা (২৭) প্রযোজ্য হবে।

 

    চাকরি হইতে আয় অর্থে নিম্নবর্ণিত আয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত হবে, যথা:-

(ক)      চাকরি হতে প্রাপ্ত বা প্রাপ্য যেকোনো প্রকার আর্থিক প্রাপ্তি, বেতন ও সুযোগ-সুবিধা;

(খ)      কর্মচারী শেয়ার স্কিম হতে অর্জিত আয়;

(গ)      কর অনারোপিত বকেয়া বেতন; বা

(ঘ)      অতীত বা ভবিষ্যতের কোনো নিয়োগকর্তা হতে প্রাপ্ত যেকোনো অঙ্ক বা সুবিধা।

 

তবে, নিম্নবর্ণিত প্রাপ্তিসমূহ চাকরি হইতে আয় এর অন্তর্ভুক্ত হবে না, যথা:-

(ক)      শেয়ারহোল্ডার পরিচালক নন এরূপ অন্য কোনো কর্মচারীর হার্ট, কিডনি, চক্ষু, লিভার ও ক্যানসার অপারেশন সংক্রান্ত চিকিৎসা ব্যয় বাবদ প্রাপ্ত অর্থ; বা

(খ)      সম্পূর্ণরূপে এবং কেবল চাকরির দায়িত্ব পরিপালনের জন্য প্রাপ্ত এবং ব্যয়িত যাতায়াত ভাতা, ভ্রমণ ভাতা ও দৈনিক ভাতা।

যেক্ষেত্রে কোনো একজন কর্মচারী চাকরির দায়িত্ব পরিপালনের জন্য যাতায়াত ভাতা, ভ্রমণ ভাতা ও দৈনিক ভাতা প্রাপ্ত হন এবং এই ভাতাসমূহের কিছু অংশ যদি ব্যয়িত না হয় তবে উক্ত অব্যয়িত অংক চাকরি হইতে আয় হিসাবে পরিগণিত হবে।

চাকরি হইতে আয় এর ক্ষেত্রে বেতন বলতে কর্মচারী কর্তৃক চাকরি হইতে প্রাপ্ত যেকোনো প্রকৃতির অংক-কে বুঝাবে এবং নিম্নবর্ণিত বিষয়াদি এর অন্তর্ভুক্ত হবে, যথা:-

(অ)     যেকোনো বেতন, মজুরি বা পারিশ্রমিক;

(আ)    যেকোনো ভাতা, ছুটি ভাতা, ছুটি নগদায়ন, বোনাস, ফি, কমিশন, ওভারটাইম;

(ই)      অগ্রিম বেতন;

(ঈ)     আনুতোষিক, অ্যানুইটি, পেনশন বা ইহাদের সম্পূরক;

(উ)      পারকুইজিট‌;

(ঊ)     বেতন বা মজুরির পরিবর্তে প্রাপ্তি অথবা বেতন বা মজুরির অতিরিক্ত প্রাপ্তি;

 

“বেতন বা মজুরির পরিবর্তে প্রাপ্তি” অথবা “বেতন বা মজুরির অতিরিক্ত প্রাপ্তি” অর্থে অন্তর্ভুক্ত হবে-

(অ)      চাকরির অবসানের কারণে প্রাপ্ত যেকোনো প্রকার ক্ষতিপূরণ, যে নামেই অভিহিত হউক না কেন;

(আ)    ভবিষ্য তহবিল বা অন্য কোনো তহবিলে কর্মচারীর অনুদানের অংশ ব্যতিরেকে অবশিষ্ট অংশ;

(ই)      চাকরির চুক্তির শর্তাবলির পরিবর্তনের ফলে প্রাপ্ত অঙ্ক বা সুবিধাদির ন্যায্য বাজার মূল্য;

(ঈ)     চাকরিতে যোগদানকালে বা চাকরির অন্য কোনো শর্তের অধীন প্রাপ্ত অঙ্ক বা সুবিধাদির ন্যায্য বাজার মূল্য;

 

“পারকুইজিট” অর্থ নিয়োগকর্তা কর্তৃক কর্মচারীকে প্রদত্ত ইনসেনটিভ বোনাসসহ যেকোনো প্রকারের পরিশোধ বা সুবিধা, তবে নিম্নবর্ণিত পরিশোধসমূহ এর অন্তর্ভুক্ত হবে না, যথা:-

(অ)      মূল বেতন, বকেয়া বেতন, অগ্রিম বেতন, উৎসব ভাতা, ছুটি নগদায়ন ও ওভারটাইম;

(আ)     স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিল, অনুমোদিত পেনশন তহবিল, অনুমোদিত আনুতোষিক তহবিল ও অনুমোদিত বার্ধক্য তহবিলে প্রদত্ত চাঁদা;

 

“মূল বেতন” অর্থ মাসিক বা অন্য প্রকারে প্রদেয় বেতন যাহার ভিত্তিতে অন্যান্য ভাতা এবং সুবিধা নির্ধারিত হয়, তবে নিম্নবর্ণিত ভাতা বা সুবিধাদি এর অন্তর্ভুক্ত হবে না, যথা:-

(অ)     সকল প্রকার ভাতা, পারকুইজিট, অ্যানুইটি, বোনাস ও সুবিধা; এবং

(আ)     নিয়োগকর্তা কর্তৃক কর্মচারীর বিভিন্ন তহবিলে প্রদত্ত চাঁদা;

 

পারকুইজিট, ভাতা সুবিধাদির আর্থিক মূল্য নির্ধারণ

আর্থিক মূল্যে প্রদেয় পারকুইজিট, ভাতা ও সুবিধা ব্যতীত অন্যান্য পারকুইজিট, ভাতা ও সুবিধার আর্থিক মূল্য নিম্নবর্ণিত সারণী মোতাবেক নির্ধারণ করতে হবে, যথা:-

 

 

 

ক্রম নং পারকুইজিট, ভাতা, সুবিধা, ইত্যাদি নির্ধারিত মূল্য
১। আবাসন সুবিধা (ক) আবাসনের ভাড়া সম্পূর্ণভাবে নিয়োগকর্তা কর্তৃক পরিশোধিত হলে অথবা নিয়োগকর্তা কর্তৃক আবাসনের ব্যবস্থা করা হলে আবাসনের বার্ষিক মূল্য;

(খ) হ্রাসকৃত ভাড়ায় প্রাপ্ত আবাসনের ক্ষেত্রে অনুচ্ছেদ (ক) অনুযায়ী নির্ধারিত ভাড়া এবং পরিশোধিত ভাড়ার পার্থক্য।

২। মোটরগাড়ি প্রতি সুবিধা (ক) ২৫০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির ক্ষেত্রে মাসিক ১০ (দশ) হাজার টাকা;

(খ) ২৫০০ সিসির অধিক এইরূপ গাড়ির ক্ষেত্রে মাসিক ২৫ (পঁচিশ) হাজার টাকা।

৩। অন্য কোনো পারকুইজিট, ভাতা বা সুবিধা পারকুইজিট, ভাতা বা সুবিধার আর্থিক মূল্য বা ন্যায্য বাজার মূল্য।

 

কর্মচারী শেয়ার স্কিম হতে অর্জিত আয়

কোনো করদাতা কর্মচারী শেয়ার স্কিমের অধীন শেয়ার প্রাপ্ত হলে, শেয়ার প্রাপ্তির বছরে   নিয়মে আয় চাকরি হইতে আয়ের সাথে যোগ হবে, যেখানে-

ক = প্রাপ্তির তারিখে শেয়ারের ন্যায্য বাজার মূল্য,

খ = শেয়ার অর্জনের ব্যয়।

শেয়ার অর্জনের ব্যয় বলতে নিম্নবর্ণিত ব্যয়সমূহের যোগফল বুঝাবে, যথা:-

(ক)     কর্মচারী শেয়ার অর্জনে যদি কোনো মূল্য পরিশোধ করেন;

(খ)      কর্মচারী শেয়ার অর্জনের অধিকার বা সুযোগ আদায়ে যদি কোনো মূল্য পরিশোধ করেন।

তবে, কর্মচারী শেয়ার স্কিমের অধীন শেয়ার অর্জনের প্রাপ্ত অধিকার বা সুযোগ কর্মচারী বিক্রয় বা হস্তান্তর করলে চাকরি হইতে আয়ের সাথে – খ  নিয়মে আয় যোগ হবে, যেখানে-

ক =  শেয়ার অর্জনের অধিকার বা সুযোগ বিক্রয় বা হস্তান্তর মূল্য,

খ =  শেয়ার অর্জনের অধিকার বা সুযোগ আদায়ে পরিশোধিত মূল্য।

চাকরি হইতে আয় পরিগণনার ক্ষেত্রে ষষ্ঠ তফসিলের অংশ ১ এর দফা (১৪) এবং দফা (২৭)-তে বর্ণিত প্রাপ্তিসমূহ করমুক্ত থাকবে। দফাসমূহ নিম্নরূপ:

(১৪) কোনো নিয়োগকারী কর্তৃক কোনো কর্মচারীর ব্যয় পুনর্ভরণ (Reimbursement) যদি-

(ক)     উক্ত ব্যয় সম্পূর্ণভাবে এবং আবশ্যকতা অনুসারে কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সূত্রে ব্যয়িত করা হয়; এবং

(খ)      নিয়োগকারীর জন্য উক্ত কর্মচারীর মাধ্যমে এইরূপ ব্যয় নির্বাহ সর্বাধিক সুবিধাজনক ছিল;

(২৭) “চাকরি হইতে আয়” হিসাবে পরিগণিত আয়ের এক-তৃতীয়াংশ বা ৪ (চার) লক্ষ ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা যা কম;

 

 

 

সরকারি বেতন আদেশভুক্ত কর্মচারীর বেতনখাতে আয় নিরূপণ

 

সরকারি বেতন আদেশভুক্ত কর্মচারীর বেতন-ভাতাদির ক্ষেত্রে আয় গণনার জন্য ইতোপূর্বে জারিকৃত প্রজ্ঞাপন ২১১-আইন/আয়কর/২০১৭, তারিখ: ২১ জুন ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ রহিতক্রমে এস.আর.ও. নং ২২৫-আইন/আয়কর-০৭/২০২৩, তারিখ; ১৩ জুলাই, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ জারি করা হয়েছে। এ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সরকারি বেতন আদেশভুক্ত একজন কর্মচারীর সরকার কর্তৃক প্রদত্ত মূল বেতন, উৎসব ভাতা ও বোনাস (যে নামেই অভিহিত হোক না কেন) করযোগ্য আয় হিসেবে বিবেচিত হবে। অবসরকালে প্রদত্ত লাম্প গ্র্যান্টসহ কেবল সরকারি বেতন আদেশসমূহে উল্লিখিত  নিম্নবর্ণিত ভাতা ও সুবিধাদি করমুক্ত থাকবে, যথা:-

 

 

 

 

 

চিকিৎসা ভাতা, নববর্ষ ভাতা, বাড়ি ভাড়া ভাতা, শ্রান্তি ও বিনোদন ভাতা, শিক্ষা সহায়ক ভাতা, কার্যভার ভাতা, পাহাড়ি ভাতা, ভ্রমণ ভাতা, যাতায়াত ভাতা, টিফিন ভাতা, পোশাক ভাতা, আপ্যায়ন ভাতা, ধোলাই ভাতা, বিশেষ ভাতা, প্রেষণ ভাতা, প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে প্রেষণ ভাতা, জুডিশিয়াল ভাতা, চৌকি ভাতা, ডোমেস্টিক এইড এলাউয়েন্স, ঝুকি ভাতা, একটিং এলাউয়েন্স, মোটরসাইকেল ভাতা, আর্মরার এলাউয়েন্স, নিঃশর্ত যাতায়াত ভাতা, টেলিকম এলাউয়েন্স, ক্লিনার এলাউয়েন্স, ড্রাইভার এলাউয়েন্স, মাউন্টেড পুলিশ এলাউয়েন্স, পিবিএক্স এলাউয়েন্স, সশস্ত্র শাখা ভাতা, বিউগলার এলাউয়েন্স, নার্সিং এলাউয়েন্স, দৈনিক বা খোরাকী ভাতা, ট্রাফিক এলাউয়েন্স, রেশন মানি, সীমান্ত ভাতা, ব্যাটম্যান ভাতা, ইন্সট্রাকশনাল এলাউয়েন্স, নিযুক্তি ভাতা, আউটফিট ভাতা এবং গার্ড পুলিশ ভাতা।

 

 

উক্ত প্রজ্ঞাপনের সুবিধাভোগী করদাতাগণের ক্ষেত্রে উপর্যুক্ত বক্সে উল্লিখিত বেতন ও ভাতাসমূহই কেবল করমুক্ত। এতদ্ব্যতীত উক্ত প্রজ্ঞাপনের সুবিধাভোগী করদাতাগণ অন্য যা কিছুই প্রাপ্ত হন না কেন, তা করযোগ্য হবে এবং উক্ত করদাতাগণ ষষ্ঠ তফসিলের দফা (২৭) এর সুবিধা প্রাপ্য হবেন না। এস.আর.ও. নং ২২৫-আইন/আয়কর-০৭/২০২৩, তারিখ; ১৩ জুলাই, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ নিম্নরূপ:

 

 

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

অর্থ মন্ত্রণালয়

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড

 (আয়কর)

প্রজ্ঞাপন

 

তারিখ: ২৯ আষাঢ় ১৪৩০ বঙ্গাব্দ/১৩ জুলাই, ২০২৩খ্রিস্টাব্দ

এস.আর.. নং ২২৫-আইন/আয়কর-০৭/২০২৩—জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, আয়কর আইন, ২০২৩(২০২৩ সনের ১২ নং আইন) এর ধারা ৭৬(১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বোর্ড, সরকারি বেতন আদেশভুক্ত কর্মচারীদের সরকার কর্তৃক প্রদত্ত মূল বেতন, উৎসব ভাতা ও বোনাস, যে নামেই অভিহিত হউক না কেন, ব্যতীত অবসরকালে প্রদত্ত লাম্প গ্র্যান্টসহ কেবল সরকারি বেতন আদেশে উল্লিখিত অন্যান্য ভাতা ও সুবিধাদিকে প্রদেয় আয়কর হইতে এতদ্দ্বারা অব্যাহতি প্রদান করিল।

ব্যাখ্যা : এই প্রজ্ঞাপনে —

(১)      সরকারি বেতন আদেশভুক্ত কর্মচারী বলিতে নিম্নবর্ণিত কর্মচারী বা ব্যক্তিকে বুঝাইবে,

যথা:—

(ক)     অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ কর্তৃক জারীকৃত,—

(অ) চাকরি (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৫ এর অনুচ্ছেদ ১ এর উপ-অনুচ্ছেদ (৪) অনুযায়ী যে সকল কর্মচারীর জন্য উক্ত আদেশ প্রযোজ্য;

(আ) চাকরি [স্ব-শাসিত (Public Bodies) এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ] (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৫, এর অনুচ্ছেদ ১ এর উপ-অনুচ্ছেদ (৪) অনুযায়ী যে সকল কর্মচারীর জন্য উক্ত আদেশ প্রযোজ্য;

(ই) চাকরি (ব্যাংক, বিমা ও ফাইন্যান্স কোম্পানি) (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৫ এর অনুচ্ছেদ  ১ এর উপ-অনুচ্ছেদ (৪) অনুযায়ী যে সকল কর্মচারীর জন্য উক্ত আদেশ প্রযোজ্য;

(ঈ) চাকরি (বাংলাদেশ পুলিশ) (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৫ এর অনুচ্ছেদ ১ এর  উপ-অনুচ্ছেদ   (৪) ‍অনুযায়ী যে সকল কর্মচারীর জন্য উক্ত আদেশ প্রযোজ্য;

(উ) চাকরি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৫ এর অনুচ্ছেদ ১ এর উপ-অনুচ্ছেদ (৪) অনুযায়ী যে সকল কর্মচারীর জন্য উক্ত আদেশ প্রযোজ্য;

(ঊ) বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৬ এর অনুচ্ছেদ ১ এর  উপ-অনুচ্ছেদ (৪) ‍অনুযায়ী যে সকল কর্মচারীর জন্য উক্ত আদেশ প্রযোজ্য;

(খ)     জাতীয় বেতনস্কেল ২০১৫ এর আলোকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারীকৃত যৌথ বাহিনী নির্দেশাবলী (Joint Services Instructions) নম্বর ০১/২০১৬ এর অনুচ্ছেদ ২ অনুযায়ী যে সকল ব্যক্তিবর্গের জন্য উক্ত নির্দেশাবলী প্রযোজ্য; এবং

(গ)      কোনো আইন, বিধি বা প্রবিধানের অধীন কোনো পদে নিয়োজিত থাকাকালীন সরাসরি সরকারি কোষাগার হইতে বেতন বা আর্থিক সুবিধা, যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, প্রাপ্ত হন ।

 

 

 

(২)      সরকারি বেতন আদেশ বলিতে নিম্নবর্ণিত আদেশ বা, ক্ষেত্রমত, নির্দেশাবলীকে বুঝাইবে,

যথা: —

(ক)     অনুচ্ছেদ (ক) এর উপ-অনুচ্ছেদ (অ) তে উল্লিখিত বেতন স্কেল সংক্রান্ত আদেশ;

(খ)      অনুচ্ছেদ (ক) এর উপ-অনুচ্ছেদ (আ) তে উল্লিখিত বেতন স্কেল সংক্রান্ত নির্দেশাবলী; এবং

(গ)      কোনো আইন, বিধি বা প্রবিধানের অধীন কোনো পদে নিয়োজিত কর্মচারীর জন্য জারীকৃত বেতন বা আর্থিক সুবিধা সংক্রান্ত আদেশ ।

২।       এই প্রজ্ঞাপনের অধীন কর অব্যাহতি প্রাপ্ত করদাতাগণ আয়কর আইন, ২০২৩ এর ষষ্ঠ তফসিল এর অংশ-১ এর দফা (২৭) এ উল্লিখিত সুবিধা প্রাপ্য হইবেন না।

৩।       ২১ জুন, ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ তারিখে জারিকৃত প্রজ্ঞাপন নং এস.আর.ও. নং ২১১-আইন/আয়কর/২০১৭ এতদ্দ্বারা রহিত করা হইল।

৪।       এই প্রজ্ঞাপন ১ জুলাই, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ তারিখে কার্যকর হইবে।

 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আদেশক্রমে,

 

আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম

সিনিয়র সচিব

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়

চেয়ারম্যান

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

 

অর্থাৎ কেবল নিম্নবর্ণিত করদাতাগণের ক্ষেত্রে এস.আর.ও. নং ২২৫-আইন/আয়কর-০৭/২০২৩, তারিখ; ১৩ জুলাই, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ প্রযোজ্য হবে, যথা-

(১)      অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত-

(ক)     চাকরি (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৫ এর অনুচ্ছেদ ১ এর উপ-অনুচ্ছেদ (৪) অনুযায়ী যে সকল কর্মচারীর জন্য উক্ত আদেশ প্রযোজ্য;

(খ)      চাকরি [স্ব-শাসিত (Public Bodies) এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ] (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৫ এর অনুচ্ছেদ ১ এর উপ-অনুচ্ছেদ (৪) অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড এবং বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনে নিয়োজিত কর্মচারী ও ব্যক্তি ব্যতীত অন্যান্য সকল স্ব-শাসিত (Public Bodies) এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসমূহে নিয়োজিত কর্মচারীগণ যাদের ক্ষেত্রে উক্ত আদেশ প্রযোজ্য;

(গ)      চাকরি (ব্যাংক, বিমা ও ফাইন্যান্স কোম্পানি) (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৫ এর অনুচ্ছেদ ১ এর উপ-অনুচ্ছেদ (৪) অনুযায়ী ব্যাংক, বিমা ও ফাইন্যান্স কোম্পানি বলতে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, আনসার ও ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, বাংলাদেশ বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, সাধারণ বীমা কর্পোরেশন, জীবন বীমা কর্পোরেশন, বাংলাদেশ সিকিউরিটিস এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন এবং মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটিতে নিয়োজিত কর্মচারীগণ যাদের ক্ষেত্রে উক্ত আদেশ প্রযোজ্য;

(ঘ)      চাকরি (বাংলাদেশ পুলিশ) (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৫ এর অনুচ্ছেদ ১ এর উপ-অনুচ্ছেদ (৪) অনুযায়ী যে সকল কর্মচারীর জন্য উক্ত আদেশ প্রযোজ্য;

(ঙ)      চাকরি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৫ এর অনুচ্ছেদ ১ এর উপ-অনুচ্ছেদ (৪) অনুযায়ী যে সকল কর্মচারীর জন্য উক্ত আদেশ প্রযোজ্য;

(চ)      বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৬ এর অনুচ্ছেদ ১ এর উপ-অনুচ্ছেদ (৪) অনুযায়ী যে সকল কর্মচারীর জন্য উক্ত আদেশ প্রযোজ্য;

(২)      জাতীয় বেতনস্কেল ২০১৫ এর আলোকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত যৌথ বাহিনী নির্দেশাবলী (Joint Services Instructions) নম্বর ০১/২০১৬ এর অনুচ্ছেদ ২ অনুযায়ী যে সকল ব্যক্তিবর্গের জন্য উক্ত নির্দেশাবলী প্রযোজ্য; এবং

(৩)      যে সকল ব্যক্তি কোনো আইন, বিধি বা প্রবিধানের অধীন কোনো পদে নিয়োজিত থাকাকালীন সরাসরি কোষাগার হতে বেতন প্রাপ্ত হন বা আর্থিক সুবিধা, তা যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, প্রাপ্ত হন।

 

এখানে উল্লেখ্য যে, উপরি-উল্লিখিত বেতন ভাতাদি আদেশসমূহে বর্ণিত ভাতা ও সুবিধাদি ব্যতীত অন্য সকল আয় করযোগ্য হবে এবং এস.আর.ও. নং ২২৫-আইন/আয়কর-৭/২০২৩, তারিখ: ১৩ জুলাই ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ এর সুবিধাভোগী করদাতারা আয়কর আইন, ২০২৩ এর ষষ্ঠ তফসিলের অংশ ১ এর দফা (২৭) এর সুবিধা প্রাপ্য হবেন না।

এখানে আরো উল্লেখ্য যে, যে সকল করদাতা উপরি-উল্লিখিত বেতন ভাতাদি আদেশসমূহের আওতায় বেতন আয় প্রাপ্ত হননা, তাদের বেতন আয় নিরূপনের ক্ষেত্রে এস.আর.ও. নং ২২৫-আইন/আয়কর-৭/২০২৩, তারিখ: ১৩ জুলাই ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ প্রযোজ্য হবে না। তাদের বেতন আয় নিরূপনের ক্ষেত্রে আয়কর আইনের ধারা ৩২-৩৪ এবং ষষ্ঠ তফসিলের দফা (১৪) এবং দফা (২৭) অনুসরণ করতে হবে।

 

 

সোনালী ব্যাংক পিএলসি, জনতা ব্যাংক পিএলসি, অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি, রূপালী ব্যাংক পিএলসি, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি ও বেসিক ব্যাংক লিমিটেড এর কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ এর “চাকুরি হইতে আয়” এর বিপরীতে কর নির্ধারণ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রজ্ঞাপন এস.আর.ও. নং- ২২৫-আইন/আয়কর-৭/২০২৩, তারিখ: ১৩ জুলাই, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ অনুযায়ী হবে কি না?

 

হ্যাঁ, হবে।

 

সোনালী ব্যাংক পিএলসি, জনতা ব্যাংক পিএলসি, অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি, রূপালী ব্যাংক পিএলসি, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি ও বেসিক ব্যাংক লিমিটেড এর কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনুবিভাগ কর্তৃক ১৫/১২/২০১৫ তারিখে জারিকৃত এস. আর.ও নং-৩৭০-আইন/২০১৫ এর মাধ্যমে প্রণীত চাকরি [স্ব-শাসিত (Public Bodies) এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ] (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৫ অনুযায়ী বেতন-ভাতাদি গ্রহণ করতে পারেন মর্মে অর্থ মন্ত্রণালয় এর স্মারক নং- ০৮.০০.০০০.১৬৫.৫৩.০০১.১৯-৩১, তারিখ: ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ এর মাধ্যমে স্পষ্ট করা হয়।

 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের উক্ত স্মারকের আলোকে উল্লেখিত ব্যাংকসমূহের বোর্ড সভায় বেতন কাঠামো হিসাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনুবিভাগ কর্তৃক ১৫/১২/২০১৫ তারিখে জারিকৃত এস.আর.ও নং-৩৭০- আইন/২০১৫ এর মাধ্যমে প্রণীত চাকরি [স্ব-শাসিত (Public Bodies) এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৫ অনুসরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

 

ফলে, এ সকল ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের “চাকুরি হইতে আয়” এর বিপরীতে কর নির্ধারণ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রজ্ঞাপন এস.আর.ও. নং- ২২৫-আইন/আয়কর-৭/২০২৩, তারিখ: ১৩ জুলাই, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ অনুযায়ী হবে। অর্থাৎ, এ সকল ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক জারীকৃত প্রজ্ঞাপন এস, আর, ও. নং- ২২৫-আইন/আয়কর-৭/২০২৩, তারিখ: ১৩ জুলাই ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ এর অধীন কর অব্যাহতি সুবিধা প্রাপ্য হবেন।

 

এখানে উল্লেখ্য, বর্ণিত ব্যাংকসমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ ২০১৭-২০১৮ করবর্ষ হতে এ সুবিধাদি প্রাপ্য হবেন।

 

 

 

উদাহরণের সাহায্যে সরকারি বেতন আদেশভুক্ত কর্মচারীর আয় এবং কর পরিগণনা নিম্নে দেখানো হলো:

 

উদাহরণ-১

জনাব আতাউর রহমান বাংলাদেশ সচিবালয়ে কর্মরত একজন সরকারি কর্মচারী এবং তার জন্য চাকরি (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ, ২০১৫ প্রযোজ্য। ফলে বেতন আয়ের ক্ষেত্রে এস.আর.ও. নং ২২৫-আইন/আয়কর-৭/২০২৩, তারিখ: ১৩ জুলাই ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ এর বিধান প্রযোজ্য হবে।

 

ধরা যাক, ৩০ জুন ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত অর্থবর্ষে তিনি নিম্নোক্ত হারে বেতন ভাতাদি পেয়েছেন:

 

মাসিক মূল বেতন              ৫৬,৫০০

মাসিক চিকিৎসা ভাতা          ১,৫০০

উৎসব ভাতা                 ১,১৩,০০০

বাংলা নববর্ষ ভাতা             ১১,৩০০

 

তিনি সরকারি বাসায় থাকেন। ভবিষ্য তহবিলে তিনি প্রতি মাসে ১৪,০০০ টাকা জমা রাখেন। হিসাবরক্ষণ অফিস হতে প্রাপ্ত প্রত্যয়নপত্র হতে দেখা যায় যে, ৩০ জুন ২০২৪ তারিখে ভবিষ্য তহবিলে অর্জিত সুদের পরিমাণ ছিল ১,০৮,৫০০ টাকা। কল্যাণ তহবিলে ও গোষ্ঠী বিমা তহবিলে চাঁদা প্রদান বাবদ প্রতি মাসে বেতন হতে কর্তন ছিল যথাক্রমে ১৫০ ও ১০০ টাকা। এছাড়াও তিনি একটি তফসিলি ব্যাংকের ডিপোজিট পেনশন স্কিমে মাসিক ৫,০০০ টাকার কিস্তি জমা করেন।

 

২০২৪-২০২৫ করবর্ষে জনাব আতাউর রহমান এর মোট আয় এবং করদায় নিম্নে পরিগণনা করা হলো:

 

মোট আয় পরিগণনা

মূল বেতন (৫৬,৫০০× ১২ মাস)                         ৬,৭৮,০০০

উৎসব ভাতা (৫৬,৫০০× ২)                              ১,১৩,০০০

চিকিৎসা ভাতা (১,৫০০×১২)= ১৮,০০০  (করমু্ক্ত)

বাংলা নববর্ষ ভাতা ১১,৩০০  (করমু্ক্ত)                             

মোট আয়                                         ৭,৯১,০০০

 

করদায় পরিগণনা

প্রথম ৩,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত ‘শূন্য’ হার                           ০

পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকার উপর ৫% হারে                   ৫,০০০

অবশিষ্ট ৩,৪১,০০০ টাকার উপর ১০% হারে               ৩৪,১০০

মোট  করদায়                       ৩৯,১০০

 

বিনিয়োগ জনিত কর রেয়াত পরিগণনা

বিনিয়োগের পরিমাণ:

১। ভবিষ্য তহবিলে চাঁদা (১৪,০০০ × ১২)               ১,৬৮,০০০

২। কল্যাণ তহবিলে চাঁদা (১৫০ × ১২)                       ১,৮০০

৩। গোষ্ঠী বিমা তহবিলে চাঁদা (১০০ × ১২)                  ১,২০০

৪। ডিপোজিট পেনশন স্কিমের কিস্তি (৫,০০০ × ১২)      ৬০,০০০

মোট বিনিয়োগ=             ২,৩১,০০০

 

* ভবিষ্য তহবিলে অর্জিত সুদ করমুক্ত

 

কর রেয়াতের পরিমাণ নির্ধারণ

 

(ক) ০.০৩ × ৭,৯১,০০০  (ক*) ২৩,৭৩০
(খ) ০.১৫ × ২,৩১,০০০  (খ*) ৩৪,৬৫০
(গ) ১০,০০,০০০
(ক) বা (খ) বা (গ), এই তিনটির মধ্যে যেটি কম ২৩,৭৩০

 

এক্ষেত্রে-

’ = কর অব্যাহতি প্রাপ্ত আয়, হ্রাসকৃত করহার প্রযোজ্য এইরূপ আয় এবং ন্যূনতম কর প্রযোজ্য এইরূপ আয় বাদ দিয়া পরিগণিত মোট আয়, এবং

’ = কোনো আয়বর্ষে ষষ্ঠ তফসিল এর অংশ ৩ অনুসারে করদাতার মোট বিনিয়োগ ও ব্যয়ের পরিমাণ।

কর রেয়াতের পরিমাণ:

কর রেয়াতের পরিমাণ হবে ২৩,৭৩০ টাকা।

প্রদেয় করের পরিমাণ (৩৯,১০০ – ২৩,৭৩০)= ১৫,৩৭০ টাকা।

 

উদাহরণ

ধরা যাক, উদাহরণ-১ এ বর্ণিত করদাতা জনাব আতাউর রহমান একটি সরকারি একাডেমিতে ক্লাস নিয়ে লেকচার প্রদান বাবদ ২০,০০০ টাকা, বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহণ বাবদ ২৫,০০০ টাকা, বিদেশ ভ্রমণ হতে ২,৫০,০০০ টাকা প্রাপ্তি প্রদর্শন করেছেন। উক্ত আয়সমূহ যেহেতু জনাব আতাউর রহমান এর জন্য প্রযোজ্য সরকারি বেতন আদেশভুক্ত নয় তাই এ সকল আয় করমুক্ত প্রাপ্তি/সুবিধা বলে গণ্য হবে না। অর্থাৎ এ সকল আয় করযোগ্য হবে।

 

উদাহরণ-৩

উদাহরণ-১ এ উল্লিখিত আয় ও বিনিয়োগ যদি কোনো প্রতিবন্ধী কর্মচারীর থাকে, তবে তার ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা হবে ৪,৭৫,০০০ টাকা। ফলে ২০২৪-২০২৫ করবর্ষে তার মোট আয় এবং করদায়ের পরিমাণ হবে নিম্নরূপ:

 

মূল বেতন (৫৬,৫০০× ১২ মাস)                         ৬,৭৮,০০০

উৎসব ভাতা (৫৬,৫০০× ২)                              ১,১৩,০০০

চিকিৎসা ভাতা (১,৫০০×১২)= ১৮,০০০  (করমু্ক্ত)

বাংলা নববর্ষ ভাতা ১১,৩০০  (করমুক্ত)                             

মোট আয়                                         ৭,৯১,০০০

 

করদায় পরিগণনা

প্রথম ৪,৭৫,০০০ টাকা পর্যন্ত ‘শূন্য’ হার                                           ০

পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকার উপর ৫%                                                   ৫,০০০

অবশিষ্ট ২,১৬,০০০ টাকার ঊপর ১০%                                             ২,০০            মোট আয়ের উপর আয়কর                                                                                         ২৬,৬০০

বিনিয়োগ জনিত আয়কর রেয়াত: পূর্ববর্তী উদাহরণ অনুসারে                      ২৩,৭৩০

পার্থক্য                 ২,৮৭০

 

করদাতার নীট প্রদেয় কর (পরিশোধযোগ্য অংক) =     ৫,০০০

 

করদাতার কর্মস্থল বাংলাদেশ সচিবালয় এর অবস্থান ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় হওয়ায় তার জন্য সর্বনিম্ন প্রদেয় করের পরিমাণ ৫,০০০ টাকা। করদাতা যদি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন বা  চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবস্থান করেন তবে তার জন্যও সর্বনিম্ন প্রদেয় করের পরিমাণ হবে ৫,০০০ টাকা। অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন এলাকার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন প্রদেয় করের পরিমাণ ৪,০০০ টাকা এবং সিটি কর্পোরেশন ব্যতীত অন্য এলাকার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন প্রদেয় করের পরিমাণ ৩,০০০ টাকা।

 

চাকরি হতে আয় রয়েছে এমন করদাতাকে প্রযোজ্যতা অনুসারে রিটার্ন আইটি-১১গ (২০২৩) এর তফসিল ১ এর অংশ ক বা খ পূরণ করতে হবে। নিম্নে তফসিল ১ উপস্থাপন করা হলো:

 

তফসিল

. সরকারি বেতন আদেশভুক্ত কর্মচারী করদাতাদের জন্য এই অংশটি প্রযোজ্য

 

বিবরণসমূহ আয়ের পরিমাণ কর অব্যাহতি প্রাপ্ত আয় নিট করযোগ্য আয়
মূল বেতন      
বকেয়া বেতন (যা পুর্বে করযোগ্য আয়ের অন্তর্ভুক্ত হয় নাই)      
বিশেষ বেতন      
বাড়িভাড়া ভাতা      
চিকিৎসা ভাতা      
যাতায়াত ভাতা      
উৎসব ভাতা      
সহায়ক কর্মীর জন্য প্রদত্ত ভাতা      
ছুটি ভাতা      
সম্মানী/ পুরস্কার      
ওভার টাইম ভাতা      
বৈশাখী ভাতা      
ভবিষ্য তহবিলে অর্জিত সুদ      
লাম্পগ্র্যান্ট      
গ্র্যাচুইটি      
অন্যান্য, যদি থাকে (বিবরণ দিন)      
মোট      

 

খ.সরকারি বেতন আদেশভুক্ত কর্মচারী ব্যতীত অন্যান্য চাকরিজীবী করদাতাদের জন্য এই অংশটি প্রযোজ্য

বিবরণ  আয়ের পরিমাণ আয়ের পরিমাণ
বেতন    
ভাতাসমূহ  
অগ্রিম/ বকেয়া বেতন  
আনুতোষিক, অ্যানুইটি, পেনশন বা ইহাদের সম্পূরক  
পারকুইজিট  
বেতন বা মজুরির পরিবর্তে প্রাপ্তি অথবা অতিরিক্ত প্রাপ্তি  
কর্মচারী শেয়ার স্কিম হইতে অর্জিত আয়  
আবাসন সুবিধা  
মোটরগাড়ি সুবিধা  
নিয়োগকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত অন্যকোনো সুবিধা  
স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে নিয়োগকর্তার প্রদত্ত চাঁদা  
অন্যান্য, যদি থাকে (বিবরণ দিন)  
মোট প্রাপ্ত বেতন  
অব্যাহতি প্রাপ্ত অংশ (৬ষ্ঠ তফসিল অংশ ১ মোতাবেক)  
চাকরি হইতে মোট আয়  

 

 

ভাড়া হইতে আয়

আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ৩৫৩৯ অনুযায়ী ভাড়া হতে আয় পরিগণনা করতে হবে।

 

ভাড়া হইতে আয় পরিগণনায় নিম্নবর্ণিত বিষয়াদি বিবেচনায় নিতে হবে, যথা:-

(১)      কোনো সম্পত্তির মোট ভাড়ামূল্য হতে অনুমোদনযোগ্য খরচ বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকবে তা-ই হবে উক্ত সম্পত্তির ভাড়া হইতে আয়।

(২)      সম্পত্তির কোনো অংশ কোনো ব্যক্তির নিজ ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হলে এবং তা হতে প্রাপ্ত আয় উক্ত ব্যক্তির ব্যবসা হইতে আয় খাতে পরিগণনাযোগ্য হলে, উক্ত অংশের জন্য ভাড়া আয় প্রযোজ্য হবে না।

(৩)      কোনো সম্পত্তির ভাড়ার প্রকৃতি, কারবার, বাণিজ্য বা ব্যবসা নির্বিশেষে যে ধরনেরই হোক না কেন, ভাড়া হইতে আয় খাতের অধীন আয় পরিগণনা করতে হবে।

 

এখানে,

সম্পত্তিঅর্থ গৃহ সম্পত্তি, জমি, আসবাবপত্র, ফিক্সার, কারখানা ভবন, ব্যবসার আঙ্গিনা, যন্ত্রপাতি, ব্যক্তিগত যানবাহন ও মূলধনি প্রকৃতির অন্য কোনো ভৌত পরিসম্পদ, যা ভাড়া প্রদান করা যায়।

 

গৃহসম্পত্তি” অর্থে যেকোন গৃহসম্পত্তি, ভবন বা দালানসহ নিম্নবর্ণিত পরিসম্পদও এর অন্তর্ভুক্ত হবে, যথা:-

(ক)     আসবাবপত্র, ফিক্সার, ফিটিংস যা উক্ত গৃহের অবিচ্ছেদ্য অংশ; এবং

(খ)      গৃহসম্পত্তি যে ভূমির উপর স্থাপিত উক্ত ভূমি, তবে সম্পূর্ণরূপে গুদাম হিসেবে ব্যবহৃত ভবন বা কোনো কারখানা ভবন যা প্ল্যান্ট ও মেশিনারি ভাড়া প্রদানের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ভাড়া প্রদান করা হয়েছে এর অন্তর্ভুক্ত হবেনা।

 

ভাড়া প্রদানঅর্থ মালিকানা বা স্বত্ব ত্যাগ ব্যতিরেকে কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সম্পত্তির ব্যবহারের অধিকার প্রদান, তবে নিজস্ব মালিকানাধীন হোক বা না হোক, কোনো তফসিলি ব্যাংক, বিনিয়োগ ব্যাংক, কোনো উন্নয়নমূলক ফাইন্যান্স কোম্পানি অথবা মুদারাবা বা লিজিং কোম্পানি কর্তৃক অন্য কোনো ব্যক্তিকে ভাড়া প্রদান অর্ন্তভুক্ত হবেনা।

 

 

 

মোট ভাড়ামূল্য পরিগণনা

 

(১) কোনো আয়বর্ষে কোনো ব্যক্তির স্বীয় মালিকানাধীন গৃহসম্পত্তির মোট ভাড়ামূল্য নিম্নবর্ণিত সূত্রানুযায়ী পরিগণনা করতে হবে, যথা:-

=    (+++ঙ), যেখানে-

ক =    মোট ভাড়ামূল্য,

খ =     নিম্নবর্ণিত অংকসমূহের মধ্যে যা অধিক, যথা:-

(অ)     গৃহসম্পত্তি হতে অর্জিত ভাড়ার পরিমাণ; বা

(আ)     গৃহসম্পত্তির বার্ষিক মূল্য;

গ =     উক্ত গৃহসম্পত্তির ভাড়া বাবদ গৃহীত সমন্বয়যোগ্য অগ্রিমের যতটুকু উক্ত আয়বর্ষে সমন্বয়কৃত হয়েছে, তবে, অসমন্বয়যোগ্য কোনো অগ্রিম বা নিরাপত্তা জামানত এর অন্তর্ভুক্ত হবে না,

ঘ =     উক্ত আয়বর্ষে উক্ত গৃহসম্পত্তি ব্যবহারসূত্রে প্রাপ্ত সেলামী বা প্রিমিয়াম ব্যতীত অন্য যেকোনো অঙ্ক বা কোনো সুবিধার অর্থমূল্য, যা খ ও গ তে উল্লিখিত অঙ্কের অতিরিক্ত,

ঙ =     গৃহসম্পত্তির ভাড়াটিয়া কর্তৃক পরিশোধিত যেকোনো প্রকারের সার্ভিস চার্জ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ চার্জ বা অন্য কোনো অর্থ, তা যে নামেই অভিহিত হোক না কেন,

চ =     শূন্যতা ভাতা যা কেবল বিদ্যুৎ বিল উপস্থাপন সাপেক্ষে প্রমাণিত হলে অনুমোদনযোগ্য হবে।

 

(২)      গৃহসম্পত্তি ব্যতীত অন্যান্য সম্পত্তির মোট ভাড়ামূল্য নিম্নবর্ণিত সূত্রানুযায়ী পরিগণিত হইবে, যথা:-

=    (খ+গ+ঘ), যেখানে-

ক =    মোট ভাড়ামূল্য,

খ =     নিম্নবর্ণিত অংকসমূহের মধ্যে যা অধিক, যথা:-

(অ)     সম্পত্তি হতে অর্জিত ভাড়ার পরিমাণ; বা

(আ)     সম্পত্তির বার্ষিক মূল্য;

গ =     উক্ত গৃহসম্পত্তির ভাড়া বাবদ গৃহীত সমন্বয়যোগ্য অগ্রিমের যতটুকু উক্ত আয়বর্ষে সমন্বয়কৃত হয়েছে, তবে, অসমন্বয়যোগ্য কোনো অগ্রিম বা নিরাপত্তা জামানত এর অন্তর্ভুক্ত হবে না,

ঘ =     অন্য কোনোভাবে সম্পত্তির ব্যবহার হতে অর্জিত আয় এবং সম্পত্তি হতে প্রাপ্ত অন্য যেকোনো অঙ্ক বা কোনো সুবিধার অর্থমূল্য, যা খ ও গ তে উল্লিখিত অঙ্কের অতিরিক্ত।

 

ভাড়া হইতে আয় পরিগণনার ক্ষেত্রে অনুমোদনযোগ্য বিয়োজন

 

কোনো ব্যক্তির স্বীয় মালিকানাধীন গৃহসম্পত্তির ভাড়া হতে প্রাপ্ত আয় পরিগণনার ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত খরচ বিয়োজনযোগ্য হবে, যথা:-

(ক) কোনো গৃহসম্পত্তির ক্ষতি বা ধ্বংসের ঝুঁকির বিপরীতে কোনো বিমা করা হলে তার জন্য পরিশোধিত প্রিমিয়াম;

(খ) গৃহসম্পত্তি অর্জন, নির্মাণ, সংস্কার বা পুনঃনির্মাণের জন্য কোনো ব্যাংক বা ফাইন্যান্স কোম্পানি হতে মূলধনি ঋণ গ্রহণ করা হলে সেই ঋণের উপর পরিশোধিত সুদ বা মুনাফা;

(গ) গৃহসম্পত্তির উপর পরিশোধিত কোনো কর, ফি বা অন্য কোনো বার্ষিক চার্জ, যা মূলধনি চার্জ প্রকৃতির নয়;

(ঘ)      গৃহসম্পত্তি অর্জন, নির্মাণ, মেরামত, নবনির্মাণ বা পুনঃনির্মাণের জন্য ব্যবহৃত কোনো মূলধনি ঋণের উপর কোনো ব্যাংক বা ফাইন্যান্স কোম্পানিকে ভাড়াপূর্ব সময়ে কোনো সুদ বা মুনাফা পরিশোধ করা হয়ে থাকলে সেই সুদ বা মুনাফা ভাড়া শুরুর সাথে সংশ্লিষ্ট আয়বর্ষ হতে একাদিক্রমে মোট ৩ (তিন) আয়বর্ষে সমকিস্তিতে:

তবে, ভাড়াপূর্ব সময়ের কোনো সুদ বা মুনাফা বা তার কোনো অংশ, যদি থাকে, উক্ত বর্ণিত সময়ের পরে বিয়োজনযোগ্য হবে না;

(ঙ) ভাড়া সংগ্রহ, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ, গ্যাস, সার্ভিস চার্জ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ চার্জ এবং অন্য কোনো মৌলিক সেবা সংক্রান্ত ব্যয়ের জন্য নিম্নবর্ণিত সারণীতে উল্লিখিত অংক, যথা:-

সারণী

ক্রমিক নং সম্পত্তির ধরন সংবিধিবদ্ধ বিয়োজন

(মোট ভাড়ামূল্যের শতকরা হারে)

 
(১) (২) (৩)  
১। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত গৃহসম্পত্তি ৩০% (ত্রিশ শতাংশ)  
২। অবাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত গৃহসম্পত্তি ২৫% (পঁচিশ শতাংশ) ;

 

(চ)      গৃহসম্পত্তির আংশিক ভাড়া প্রদানের ক্ষেত্রে আংশিক ভাড়ার বিপরীতে আনুপাতিক হারে খরচ অনুমোদনযোগ্য হবে;

(ছ)      যেক্ষেত্রে কোনো গৃহসম্পত্তি আয়বর্ষের অংশবিশেষের জন্য ভাড়া প্রদান করা হয়, সেক্ষেত্রে ভাড়া প্রদানকৃত সময়ের আনুপাতিক হারে খরচ অনুমোদনযোগ্য হবে।

 

উদাহরণ-৪

ধরা যাক, ঢাকার গুলশান এলাকায় মিজ শায়লা আজিজের একটি তিনতলা আবাসিক বাড়ী রয়েছে। ঐ বাড়ীর নীচতলায় তিনি সপরিবার বসবাস করেন। ২য় ও ৩য় তলা আবাসিক ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট আয়বর্ষের জুলাই মাস থেকে মাসিক ৬০,০০০ টাকায় ভাড়া দিয়েছেন। তিনি সমন্বয়যোগ্য অগ্রিম হিসেবে দুজন ভাড়াটিয়া হতে ৮,০০,০০০ টাকা করে গ্রহণ করেছেন। তন্মধ্যে, ২,৪০,০০০ টাকা করে (২০,০০০ × ১২ মাস) সারা বছরে সমন্বয় করেছেন। এছাড়াও, তিনি প্রত্যেক ভাড়াটিয়া হতে নিরাপত্তা জামানত হিসেবে ১০,০০,০০০ টাকা করে গ্রহণ করেছেন। তিনি ভাড়ার সাথে পৌরকর বাবদ ২৪,০০০ টাকা, ভূমির খাজনা বাবদ ৯০০ টাকা এবং গৃহ-নির্মাণ ঋণের ব্যাংক সুদ বাবদ ৩০,০০০ টাকা পরিশোধ করেছেন। মিজ আজিজের গৃহ-সম্পত্তি হতে আয়ের হিসাব হবে নিম্নরূপ:

  ভাড়ামূল্য = (মাসিক ভাড়া ৬০,০০০ × ১২ × ২  মাস)   = ১৪,৪০,০০০  
বাদ: অনুমোদনযোগ্য খরচ    
১। মেরামত ব্যয় (ভাড়ার ২৫%)     ৩৬০,০০০  
২। পৌর কর (২৪,০০০×  ২/৩)* ১৬,০০০  
৩। ভূমি রাজস্ব (৯০০×  ২/৩)*     ৬০০  
৪। গৃহ নির্মাণ ঋণের সুদ (৩০,০০০×  ২/৩)*              ২০,০০০

 

 
 

*স্বনিবাস ১/৩ অংশ ও ভাড়া ২/৩ অংশ

৩,৯৬,৬০০
গৃহ-সম্পত্তি থেকে নীট আয় = ১০,৪৩,৪০০

(সংশ্লিষ্ট আয়বর্ষে মিজ শায়লা আজিজ মোট সমন্বয়যোগ্য অগ্রিম গ্রহণ করেছেন (৮,০০,০০০×২) টাকা= ১৬,০০,০০০ টাকা। তন্মধ্যে, মাসিক সমন্বয়যোগ্য ২০,০০০ টাকা ভাড়ামূল্য হিসেবে প্রাপ্ত ৬০,০০০ টাকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে প্রতি মাসে সমন্বয় করেছেন। অর্থাৎ, সারা বছরে সমন্বয় করেছেন (২০,০০০×১২×২) = ৪,৮০,০০০ টাকা। ফলে, অসমন্বয়কৃত অংক দাঁড়ায় (১৬,০০,০০০-৪,৮০,০০০) টাকা = ১১,২০,০০০ টাকা। তিনি নিরাপত্তা জামানত হিসেবে গ্রহণ করেছেন মোট (১০,০০,০০০×২) = ২০,০০,০০০ টাকা। উক্ত অসমন্বয়কৃত অগ্রিম এবং নিরাপত্তা জামানত বাবদ (১১,২০,০০০ + ২০,০০,০০০) টাকা বা, ৩১,২০,০০০ টাকা তিনি রিটার্নের পরিসম্পদ, দায় ও ব্যয় বিবরণিতে অপ্রাতিষ্ঠানিক দায় হিসেবে প্রদর্শন করবেন। মোট আয় পরিগণনার ক্ষেত্রে উক্ত অংকের কোন প্রভাব নেই।)

 

মিজ আজিজের নিরূপিত মোট আয় ১০,৪৩,৪০০ টাকার বিপরীতে ধার্য্যকৃত করের পরিমাণ হবে-

মোট আয় করহার করের পরিমাণ
প্রথম ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর শূন্য শূন্য
পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর ৫% ৫,০০০
পরবর্তী ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর ১০% ৪০,০০০
অবশিষ্ট ১,৪৩,৪০০ টাকা আয়ের উপর- ১৫% ২১,৫১০
মোট      ৬৬,৫১০

 

প্রদেয় করের পরিমাণ ৬৬,৫১০ টাকা।

এক বা একাধিক ভাড়াটিয়ার নিকট থেকে বাড়ী ভাড়া বাবদ মাসিক সর্বমোট ২৫ হাজার টাকার বেশী প্রাপ্ত হলে বাড়ীর মালিককে ব্যাংক হিসাবে প্রাপ্ত ভাড়া জমা করতে হবে। বাড়ীর মালিক (ব্যক্তি, ফার্ম, কোম্পানি বা অন্য যে কোনো প্রতিষ্ঠান) কর্তৃক এ বিধান পরিপালন করা না হলে গৃহ-সম্পত্তি বাবদ অর্জিত আয়ের উপর প্রদেয় আয়করের ৫০% অথবা ন্যূনতম ৫,০০০ টাকা (যেটি বেশি) হারে জরিমানা আরোপযোগ্য হবে।

 

কোনো করদাতার ব্যবসা হইতে আয় থাকলে তাকে ব্যবসা/পেশা সংশ্লিষ্ট বাড়ী, অফিস বা দোকান ভাড়া বাবদ প্রদেয় অর্থ অবশ্যই ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায়, প্রদত্ত ভাড়া তার ব্যবসায়িক খরচ হিসেবে বিবেচিত হবে না।

 

কৃষি হইতে আয়

    আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ৪০৪৪ অনুযায়ী কৃষি হইতে আয় নিরূপিত হবে। ষষ্ঠ তফসিলের দফা (২০) অনুযায়ী কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তির “কৃষি হইতে আয়” খাতের আওতাভুক্ত অনধিক ২ (দুই) লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত থাকবে, যদি উক্ত ব্যক্তি-

(ক)     পেশায় একজন কৃষক হন;

(খ)      এর সংশ্লিষ্ট আয়বর্ষে নিম্নবর্ণিত আয় ব্যতীত কোনো আয় না থাকে, যথা;-

(অ)     জমি চাষাবাদ হতে উদ্ভূত আয়;

(আ)    সুদ বা মুনাফা বাবদ অনধিক ২০ (বিশ) হাজার টাকা আয়।

 

কোনো ব্যক্তির কৃষি সম্পর্কিত কার্যাবলি হতে অর্জিত আয় কৃষি হইতে আয় হিসাবে পরিগণিত হবে। কৃষি অর্থে যেকোনো প্রকার উদ্যান পালন, পশু-পাখি পালন, ভূমির প্রাকৃতিক ব্যবহার, হাঁস-মুরগি ও মাছের খামার, সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীর খামার, নার্সারি, ভূমিতে বা জলে যেকোনো প্রকারের চাষাবাদ, ডিম-দুধ উৎপাদন, কাঠ, তৃণ ও গুল্ম উৎপাদন, ফল, ফুল ও মধু উৎপাদন এবং বীজ উৎপাদন অন্তর্ভুক্ত হবে।

 

তবে, কোনো ব্যক্তি কর্তৃক উৎপাদিত ও প্রক্রিয়াকৃত চা এবং রাবার এর বিক্রয়লব্ধ অর্থের ৪০% (চল্লিশ শতাংশ) ব্যবসা আয় এবং ৬০% (ষাট শতাংশ) কৃষি হইতে আয় বলে গণ্য হবে।

 

 

 

 

কৃষি হইতে আয় গণনার ক্ষেত্রে অনুমোদিত সাধারণ বিয়োজনসমূহ

 

সম্পূর্ণরূপে এবং কেবল কৃষির উদ্দেশ্যে ব্যয়িত অর্থ বিয়োজন হিসাবে অনুমোদনযোগ্য হবে এবং নিম্নবর্ণিত বিয়োজনসমূহ সাধারণ বিয়োজন হিসাবে গণ্য হবে, যথা:-

(ক)     কৃষির উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত ভূমি বা আঙ্গিনার উপর পরিশোধিত যেকোনো প্রকার কর, ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা;

(খ)      কৃষির উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত ভূমি বা আঙ্গিনার জন্য পরিশোধযোগ্য ভাড়া, উন্নয়ন ও সংরক্ষণ ব্যয় এবং চাষাবাদ ব্যয়;

(গ)      কৃষির উদ্দেশ্যে গৃহীত ঋণের পরিশোধযোগ্য সুদ বা মুনাফা;

(ঘ)      কৃষিকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত এবং চাষাবাদের জন্য পালিত গবাদিপশুর লালন-পালন, তৎসংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়াকরণ বা পরিবহণ সংক্রান্ত ব্যয়;

(ঙ)      ভূমির বা আঙ্গিনার ক্ষতিপূরণে অথবা ভূমি বা আঙ্গিনা হতে উৎপাদিত ফসল বা পণ্যের ক্ষতিপূরণে অথবা গবাদিপশু পালনে নিরাপত্তার লক্ষ্যে পরিশোধযোগ্য বিমার প্রিমিয়াম;

(চ)      প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা অন্য কোনো প্রকার ক্ষতিসাধন হতে কৃষিকে রক্ষার নিমিত্ত ব্যয়িত অর্থ;

(ছ)      আয়কর আইনের তৃতীয় তফসিলে বর্ণিত অনুমোদিত সীমা অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত খরচসমূহ-

(অ)     করদাতা কর্তৃক সংশ্লিষ্ট কৃষিতে ব্যবহৃত সম্পদের অবচয়;

(আ)     সংশ্লিষ্ট কৃষিকাজে ব্যবহৃত স্পর্শাতীত সম্পদের অ্যামোর্টাইজেশন;

(জ)     যেক্ষেত্রে করদাতার কৃষিকাজে ব্যবহৃত পশুর মৃত্যু হয়েছে বা স্থায়ীভাবে অক্ষম হয়ে গিয়েছে সেক্ষেত্রে উক্ত পশুর প্রকৃত ক্রয়মূল্য এবং, ক্ষেত্রমত, সেই পশু বিক্রয় বা উক্ত পশুর মাংস বিক্রয় হতে প্রাপ্ত অর্থ, এই দুইয়ের পার্থক্যের সমপরিমাণ অঙ্ক;

(ঝ)     সরকার কর্তৃক স্পন্সরকৃত কৃষি সম্পর্কিত কোনো ডেলিগেশনের সদস্য হিসেবে বিদেশে সফর সম্পর্কিত কোনো নির্বাহকৃত ব্যয়, যা মূলধনি প্রকৃতির নয়;

(ঞ)     বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে এমন কোনো স্কিমের সাথে সম্পর্কিত বিষয়ের উপর বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রশিক্ষণ প্রদানে নির্বাহকৃত কোনো ব্যয়;

(ট)      কোনো কৃষি সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিচালনা খাতে নির্বাহকৃত ব্যয় বা এরূপ কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিচালনায় নির্বাহকৃত ব্যয় যার দ্বারা গবেষণাটি সম্পূর্ণ ও একান্তভাবে করদাতার কৃষির উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশে পরিচালিত হয়েছে।

হিসাববহি রক্ষণাবক্ষেণ না করার ক্ষেত্রে বিশেষ বিয়োজন পরিগণনা

 

কৃষি খাতে আয়ের জন্য হিসাবের খাতাপত্র রাখা না হলে উৎপাদিত কৃষি পণ্যের বাজার মূল্যের ৬০% (ষাট শতাংশ) অনুমোদিত ব্যয় হিসাবে গণ্য হবে। তবে, যেক্ষেত্রে ভূমি বা আঙ্গিনার মালিক আধি, বর্গা, ভাগা বা অংশহারে কৃষি হইতে আয় প্রাপ্ত হবেন সেক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।

কৃষি খাতে আয়ের জন্য হিসাবের খাতাপত্র রাখা না হলে নীচের উদাহরণ অনুযায়ী কৃষি আয় হিসাব করতে হবে:

 

 

 

উদাহরণ-৫

ধরা যাক, জনাব সৌমিক এর কৃষি জমির পরিমাণ ২ একর। একর প্রতি ধান উৎপাদনের পরিমাণ ৪৫ মণ। প্রতি মণ ধানের বাজারমূল্য ৮০০ টাকা হলে নীট করযোগ্য কৃষি আয়ের পরিমাণ হবে:

২ একর ×  ৪৫ মণ ×  ৮০০ টাকা           = ৭২,০০০ টাকা

বাদ: উৎপাদন ব্যয় ৬০%                     = ৪৩,২০০ টাকা

নীট কৃষি আয়  = ২৮,৮০০ টাকা

 

কোনো করদাতার আয়ের উৎস যদি শুধুমাত্র কৃষি খাত হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে কৃষি খাতের আয় ২,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত থাকবে। অর্থাৎ যদি কোনো করদাতার কৃষি খাতের আয় ব্যতীত আর কোনো খাতে আয় না থাকে তা হলে তার জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা হবে-

 

(ক)  ৬৫ বছরের নীচে পুরুষ করদাতার ক্ষেত্রে:

(৩,৫০,০০০ + ২,০০,০০০) = ৫,৫০,০০০ টাকা

(খ)  মহিলা করদাতা বা ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের পুরুষ করদাতার ক্ষেত্রে:

(৪,০০,০০০ + ২,০০,০০০) = ৬,০০,০০০ টাকা

(গ)  প্রতিবন্ধী ব্যক্তি করদাতার ক্ষেত্রে:

(৪,৭৫,০০০ + ২,০০,০০০) = ৬,৭৫,০০০ টাকা

(ঘ) গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার ক্ষেত্রে:

( ৫,০০,০০০+২,০০,০০০) = ৭,০০,০০০ টাকা।

 

 

কৃষি হইতে আয় প্রদর্শনের জন্য রিটার্নে নিম্নবর্ণিত তফসিল রয়েছে, যথা:-

তফসিল

               আয়ের সারসংক্ষেপ টাকার পরিমাণ
০১ বিক্রয়/ টার্নওভার/ প্রাপ্তি  
০২ গ্রস মুনাফা  
০৩ সাধারণ ব্যয়, বিক্রয়জনিত ব্যয়, ভূমি উন্নয়ন কর, খাজনা, ঋনের সুদ, বিমা প্রিমিয়াম এবং অন্যান্য ব্যয়সমূহ  
০৪ নিট আয় (ক্রমিক ০২ হইতে ক্রমিক ০৩ এর বিয়োগফল)  

 

 

 ব্যবসা হইতে আয়

আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ৪৫-৫৬ এবং তৃতীয় তফসিল অনুযায়ী ব্যবসা হইতে আয় পরিগণনা করতে হবে।

নিম্নবর্ণিত আয়সমূহ ব্যবসা হইতে আয় হিসাবে পরিগণিত হবে, যথা:-

(ক)     আয়বর্ষের যেকোনো সময়ে করদাতা কর্তৃক পরিচালিত বা পরিচালিত বলে গণ্য ব্যবসায়ের কোনো লাভ ও মুনাফা;

(খ)      কোনো ব্যবসায় বা পেশাজীবী সংগঠন বা এরূপ কোনো সংগঠন কর্তৃক তার সদস্যদের নির্দিষ্ট সেবা প্রদানের মাধ্যমে অর্জিত কোনো আয়;

(গ)      কোনো ব্যক্তির অতীত, বর্তমান বা সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ ব্যবসায়িক সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় বা সম্পর্কের কারণে উদ্ভূত কোনো সুবিধার ন্যায্য বাজার মূল্য, তা অর্থে রূপান্তরযোগ্য হউক বা না হউক;

(ঘ)      মুদ্রা বিনিময় হতে নগদায়িত লাভ (realized gain) যদি তা মূলধনি পরিসম্পদ অর্জন সংশ্লিষ্ট না হয়;

(ঙ)      বন্ধ হয়ে যাওয়া কোনো ব্যবসা হতে কোনো আয়বর্ষে গৃহীত কোনো আয়।

 

“ব্যবসা” অর্থে নিম্নবর্ণিত বিষয়াদি অন্তর্ভুক্ত, যথা:-

(ক)     কোনো ট্রেড, বাণিজ্য বা পণ্য উৎপাদন;

(খ)      কোনো ট্রেড, বাণিজ্য বা পণ্য উৎপাদনধর্মী কোনো ঝুঁকি গ্রহণ বা কর্মপ্রচেষ্টা;

(গ)      লাভজনক বা অলাভজনক কোনো সত্তার পণ্য বা সেবার বিনিময়; বা

(ঘ)      যেকোনো পেশা বা বৃত্তি;

 

 

ব্যবসা হইতে আয় গণনার ক্ষেত্রে অনুমোদনযোগ্য সাধারণ বিয়োজনসমূহ

 

কোনো আয়বর্ষে কোনো ব্যক্তির ব্যবসা হতে আয় পরিগণনার ক্ষেত্রে প্রত্যেক স্বতন্ত্র এবং ভিন্ন ব্যবসায়ের জন্য নিম্নবর্ণিত ব্যয়সমূহ সাধারণ বিয়োজনের অন্তর্ভুক্ত হবে, যথা:-

(ক)     কাঁচামাল, মজুদ, ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে ও ব্যবসায়ে ব্যবহারের নিমিত্ত পণ্য ক্রয় বাবদ ব্যয় এবং কোনো অবলোপিত মজুদ ব্যয়;

(খ)      এই আইন ও দানকর আইন, ১৯৯০ (১৯৯০ সনের ৪৪ নং আইন) এর অধীন পরিশোধিত নয়, তবে ব্যবসার উদ্দেশ্যে পরিশোধিত এইরূপ শুল্ক-করাদি, পৌর কর, স্থানীয় কর, ভূমি উন্নয়ন কর বা খাজনা ও সরকারি ফি;

(গ)      ব্যবসার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত ভূমি বা আঙ্গিনার জন্য পরিশোধযোগ্য ভাড়া, উন্নয়ন ও সংরক্ষণ ব্যয়;

(ঘ)      এই আইনের অধীন চাকরি হইতে আয় হিসাবে পরিগণিত হয় এরূপ সকল প্রকার ব্যয়, কল্যাণ ব্যয় বা পারিশ্রমিক;

(ঙ)      মেরামত ও সংরক্ষণ ব্যয়;

(চ)      ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে কৃত ও পরিশোধিত বিমা প্রিমিয়াম;

(ছ)      বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ অন্যান্য পরিষেবা ব্যয়;

(জ)     পণ্য পরিবহণ, ক্লিয়ারিং এবং ফরওয়ার্ডিং চার্জ;

(ঝ)     বিক্রয় সংশ্লিষ্ট কমিশন, দালালি, ডিসকাউন্ট বা ওয়ারেন্টি চার্জ প্রকৃতির ব্যয়;

(ঞ)     বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা ব্যয়;

(ট)      কর্মীদের প্রশিক্ষণ বাবদ ব্যয়;

(ঠ)      বিক্রয় প্রতিনিধিদের সম্মেলন, হোটেল ও আবাসন বাবদ ব্যয়;

(ড)      যাতায়াত ও ভ্রমণ বাবদ ব্যয়;

(ঢ)      ইন্টারনেট সেবা, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সংক্রান্ত ব্যয়;

(ণ)      আইনি সেবা, নিরীক্ষা সেবা ও অন্যান্য পেশাদারী সেবা গ্রহণ সংক্রান্ত ব্যয়;

(ত)     আপ্যায়ন ও অতিথিশালা সংক্রান্ত ব্যয়;

(থ)      আয়কর আইনের তৃতীয় তফসিল সাপেক্ষে, বৈদেশিক মুদ্রার নগদায়িত বিনিময় ক্ষতি;

(দ)      কোনো ক্লাব বা বাণিজ্যিক সমিতিতে প্রবেশ ফি-সহ তাহাদের সুবিধাদির ব্যবহারের জন্য চাঁদা;

(ধ)      সরকার কর্তৃক স্পন্সরকৃত কোনো ট্রেড ডেলিগেশনের সদস্য হিসাবে বিদেশে সফর সম্পর্কিত কোনো নির্বাহকৃত ব্যয়;

(ন)      রয়্যালটি, কারিগরি ফি, হেড অফিস ব্যয়;

(প)      শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল, কল্যাণ তহবিল এবং বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন, ২০০৬ (২০০৬ সনের ২৫ নং আইন) এর ধারা ২৩৪ এর অধীন স্থাপিত শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলে প্রদত্ত অর্থ যাহা প্রদর্শিত নীট ব্যবসায়িক মুনাফার ৫% (পাঁচ শতাংশ) এর অধিক নহে; এবং

(ফ)     সম্পূর্ণ ও একান্তভাবে ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে নির্বাহকৃত অন্যান্য ব্যয়।

 

এছাড়াও বিশেষ বিয়োজন হিসাবে নিম্নবর্ণিত খরচসমূহ অনুমোদনযোগ্য হবে, যথা:-

(ক)     সাধারণ অবচয় ভাতা;

(খ)      প্রারম্ভিক অবচয় ভাতা;

(গ)      ত্বরান্বিত অবচয় ভাতা;

(ঘ)      অ্যামোর্টাইজেশন ভাতা;

(ঙ)      গবেষণা ও উন্নয়ন ব্যয়; এবং

(চ)      কুঋণ ব্যয়।

 

স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার ব্যবসা খাতে সহজে আয় নিরূপণের জন্য রিটার্নে তফসিল ৪ প্রবর্তন করা হয়েছে, যা নিম্নরূপ:-

 

তফসিল

 

ব্যবসার নাম:                                                             ব্যবসার ধরন:

ঠিকানা:

               আয়ের সারসংক্ষেপ টাকার পরিমাণ
০১ বিক্রয়/ টার্নওভার/ প্রাপ্তি  
০২ গ্রস মুনাফা  
০৩ সাধারণ, প্রশাসনিক, বিক্রয়জনিত এবং অন্যান্য ব্যয়সমূহ  
০৪ কুঋণ ব্যয়  
০৫ নিট মুনাফা (ক্রমিক ০২ হইতে ক্রমিক ০৩ ও ০৪ এর বিয়োগফল)  

 

             স্থিতিপত্রের সারসংক্ষেপ টাকার পরিমাণ
০৬ নগদ ও ব্যাংক স্থিতি  
০৭ মজুদ  
০৮ স্থায়ী পরিসম্পদ  
০৯ অন্যান্য পরিসম্পদ  
১০ মোট পরিসম্পদ (০৬+০৭+০৮+০৯)  
১১ প্রারম্ভিক মূলধন  
১২ নীট মুনাফা  
১৩ আয় বর্ষে ব্যবসা হতে উত্তোলন  
১৪ সমাপনী মূলধন (১১+১২-১৩)  
১৫ দায়সমূহ  
১৬ মোট পরিসম্পদ ও দায় (১৪+১৫)  

 

ব্যবসা খাতে আয় নিরূপণ এবং কর পরিগণনা নিম্নে উদাহরণের সাহায্যে দেখানো হলো:

 

উদাহরণ-৬

ধরা যাক, জনাব অতল আনন্দ ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় স্টেশনারী দ্রব্যাদি ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসায় নিয়োজিত। ০১ জুলাই ২০২৩ তারিখ হতে ৩০ জুন ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত তার মোট বিক্রয়ের পরিমাণ ৩০,০০,০০০ টাকা। বিক্রিত মালামালের ক্রয়মূল্য ২৪,০০,০০০ টাকা, কর্মচারীর বেতন ৬০,০০০ টাকা, ইলেকট্রিক বিল, দোকান ভাড়া, ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন ফিস ও পরিবহন খরচ এর সমষ্টি ১,০০,০০০ টাকা। আয়বর্ষের শুরুতে তিনি ফার্নিচার ক্রয় বাবদ ব্যয় করেছেন ৪০,০০০ টাকা।

 

জনাব অতল আনন্দের ব্যবসা খাতে নীট আয় পরিগণনা ও করদায় হবে নিম্নরূপ:

মোট বিক্রয়ের পরিমাণ   ৩০,০০,০০০
বাদ: বিক্রিত মালামালের ক্রয়মূল্য   ২৪,০০,০০০
গ্রস মুনাফা   ৬,০০,০০০
বাদ: খরচ    
কর্মচারীর বেতন ৬০,০০০  
ইলেকট্রিক বিল, দোকান ভাড়া, ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন ফিস ও পরিবহন খরচ  

১,০০,০০০

 
ফার্নিচার ক্রয় বাবদ ব্যয় ৪০,০০০  মূলধনী জাতীয় খরচ বিধায় এ খরচ নীট আয় নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বাদ দেয়া যাবে না  

 

শূন্য

 
মোট খরচ   ১,৬০,০০০
ব্যবসা খাতে অবচয়-পূর্ব আয়

বাদ: অবচয় (depreciation)

ব্যবসায় ব্যবহৃত হবার কারণে ফার্নিচার ৪০,০০০ টাকার উপর তৃতীয় তফসিল অনুযায়ী ১০% হারে ৪,০০০ টাকা অবচয় ভাতা প্রাপ্য হবেন

ব্যবসা খাতে নীট আয়=

৪,৪০,০০০

 

 

 

৪,০০০

৪,৩৬,০০০

 

করদাতার নিরূপিত মোট আয় টাকার বিপরীতে করদায়ের পরিমাণ হবে নিম্নরূপ:

 

প্রথম ৩,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের উপর শূন্য
পরবর্তী ৮৬,০০০ টাকা আয়ের উপর ৫% ,০০
মোট ,০০

          

করদাতার ব্যবসার অবস্থান ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় বিধায় ন্যূনতম করদায় ৩০০০ টাকা। কাজেই, করদাতার প্রদেয় কর ৪৩০০ টাকা।

 

 

 

 

মূলধনি আয়

 

আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ৫৭৬১ অনুযায়ী মূলধনি আয় পরিগণনা করতে হবে।

মূলধনি পরিসম্পদের মালিকানা হস্তান্তর হতে উদ্ভূত মুনাফা ও লাভ মূলধনি আয় হবে। তবে কোনো পরিসম্পদ যা প্রকৃত অর্থে হস্তান্তরিত হয়নি, তা হতে উদ্ভূত কোনো ধারণাগত লাভ বা মুনাফা মূলধনি আয় হিসাবে পরিগণিত হবেনা।

 

পরিসম্পদের উন্মুক্ত বাজারে বিক্রয় বা হস্তান্তর মূল্য এবং উক্ত পরিসম্পদের অর্জন মূল্যের পার্থক্য মূলধনি আয় হিসাবে পরিগণিত হবে। পরিসম্পদের উন্মুক্ত বাজারে বিক্রয় বা হস্তান্তর মূল্য হবে ‘ক’ এবং ‘খ’ এর মধ্যে যা অধিক, যেখানে-

ক = পরিসম্পদ হস্তান্তর হইতে প্রাপ্ত বা উপচিত অর্থ; এবং

খ = হস্তান্তরের তারিখে পরিসম্পদের ন্যায্য বাজার মূল্য;

“পরিসম্পদের অর্জন মূল্য” বলতে-

(অ)     কোনো পরিসম্পদের অর্জন মূল্য হবে নিম্নবর্ণিত খরচসমূহের সমষ্টি-

(১)      এরূপ কোনো খরচ যা কেবল উক্ত পরিসম্পদের স্বত্ব হস্তান্তরের সাথে সম্পর্কিত;

(২)      পরিসম্পদের ক্রয়মূল্য; এবং

(৩)      আয়কর আইনের ধারা ৩৮, ৪২, ৪৯, ৫০ বা ৬৪ অনুযায়ী অনুমোদিত খরচ ব্যতীত উক্ত পরিসম্পদ উন্নয়নের খরচ (যদি থাকে);

(আ)     যেক্ষেত্রে হস্তান্তরকারি উক্ত পরিসম্পদ নিম্নবর্ণিতভাবে অর্জন করেছেন-

(১)      কোনো উপহার, দান বা উইলের অধীন;

(২)      সাকসেশন, উত্তরাধিকার বা পরম্পরাক্রমে;

(৩)      প্রত্যাহারযোগ্য বা অপ্রত্যাহারযোগ্য কোনো ট্রাস্টের হস্তান্তরের অধীন;

(৪)      কোনো কোম্পানি অবসায়নের জন্য মূলধনি পরিসম্পদের কোনো বিতরণের মাধ্যমে; বা

(৫)      কোনো ফার্ম বা ব্যক্তিসংঘ বা হিন্দু অবিভক্ত পরিবারের বিভাজনের ক্ষেত্রে মূলধনি পরিসম্পদের বিতরণের মাধ্যমে,

সেক্ষেত্রে হস্তান্তরকারী কর্তৃক উক্ত পরিসম্পদের মালিকানা অর্জনের তারিখের ন্যায্য বাজার মূল্য উক্ত পরিসম্পদের অর্জনমূল্য হিসাবে বিবেচিত হবে।

 

 

    “মূলধনি পরিসম্পদঅর্থ

(ক)     কোনো করদাতা কর্তৃক ধারণকৃত যেকোনো প্রকৃতির বা ধরনের সম্পত্তি;

(খ)      কোনো ব্যবসা বা উদ্যোগ (undertaking) সামগ্রিকভাবে বা ইউনিট হিসাবে;

(গ)      কোনো শেয়ার বা স্টক,

তবে নিম্নবর্ণিত বিষয়সমূহ এর অন্তর্ভুক্ত নয়, যথা:-

(অ)     করদাতার ব্যবসার উদ্দেশ্যে ধারণকৃত কোনো মজুদ, ভোগ্য পণ্য বা কাঁচামাল;

(আ)     ব্যক্তিগত ব্যবহার্য সামগ্রী, যেমন- অস্থাবর সম্পত্তি অর্থে অন্তর্ভুক্ত পরিধেয় পোশাক, স্বর্ণালংকার, আসবাবপত্র, ফিক্সার বা কারুপণ্য, যন্ত্রপাতি ও যানবাহন যা করদাতা কর্তৃক অথবা তার উপর নির্ভরশীল পরিবারের কোনো সদস্য কর্তৃক কেবল ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয় এবং তার ব্যবসার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয় না।

 

অর্থাৎ মূলধনি পরিসম্পদের মধ্যে জমি, বাড়ী, এ্যাপার্টমেন্ট, কমার্শিয়াল স্পেস, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার বা মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিট ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে ব্যক্তিগত ব্যবহার্য গাড়ী, কম্পিউটার, আসবাবপত্র, অলংকার ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত হবে না।

 

কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তি কর্তৃক গৃহীত অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) লক্ষ টাকার কোনো মূলধনি আয় করমুক্ত থাকবে, যদি তা –

(ক) তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি বা তহবিলের শেয়ার বা ইউনিট হস্তান্তর হতে অর্জিত হয়; এবং

(খ) কোনো কোম্পানি বা তহবিলের স্পনসর, ডিরেক্টর বা প্লেসমেন্ট শেয়ার বা ইউনিট হস্তান্তর হতে অর্জিত না হয়।

 

 

 

 

 

মূলধনী লাভ খাতে আয় পরিগণনা

 

 

উদাহরণ-৭:

মিজ্‌ ইশরাত অনু ঢাকার গুলশান থানার বাসিন্দা। তিনি ২০২৩-২০২৪ আয়বর্ষে ব্যবসা হতে ২০,০০,০০০ টাকা নিট মুনাফা প্রাপ্ত হন। উক্ত আয়ের বিপরীতে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে তিনি ২,৪০,০০০ টাকা অগ্রিম কর পরিশোধ করেন। মিজ্‌ অনুর ক্যাপিটাল মার্কেটে বেনেফিশিয়ারি হিসাবে নগদায়িত অর্জন রয়েছে ৫৫,০০,০০০ টাকা এবং অনগদায়িত অর্জন রয়েছে ৩০,০০,০০০ টাকা। বিবেচ্য আয়বর্ষে তিনি ৫০,০০,০০০ টাকার সেকেন্ডারি শেয়ার ক্রয়ে বিনিয়োগ করেন। ২৩ জুন ২০২৪ তারিখে তিনি গুলশান এলাকায় পাঁচ কাঠার একটি বাণিজ্যিক প্লট সাফ কবলা দলিলমূলে বিক্রয় করেন। যার হস্তান্তর মূল্য ছিলো ১ কোটি টাকা। হস্তান্তর দলিল রেজিস্ট্রেশনকালে তিনি ৪ লাখ টাকা উৎসে কর পরিশোধ করেন এবং হস্তান্তর জনিত অন্যান্য সকল খরচ ক্রেতা পরিশোধ করেন। উক্ত প্লট তিনি তার পিতার নিকট হতে ২১ জানুয়ারি ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে হেবামূলে প্রাপ্ত হন। হেবা দলিলে জমির মূল্য হিসেবে ২৫ লাখ টাকার উল্লেখ রয়েছে। করদাতার অন্য কোনো প্রকার আয় নেই। করদাতার ২০২৪-২০২৫ করবর্ষের আয় ও কর পরিগণনা হবে নিম্নরূপ:

 

 

 

করদাতার করযোগ্য মোট আয় নিম্নরূপ:
ক্রম আয়ের খাত   করযোগ্য মোট আয়
১। ব্যবসা হতে নীট আয়   ২০,০০,০০০
২। বেনেফিশিয়ারি হিসেবে নগদায়িত মূলধনি আয়*

(৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত)

(৫৫,০০,০০০-৫০,০০,০০০) ৫,০০,০০০
নিয়মিত উৎসের আয় ২৫,০০,০০০
৩। জমি হস্তান্তর হতে মূলধনি আয় (চূড়ান্ত করদায়ভুক্ত) (১,০০,০০,০০০-২৫,০০,০০০) ৭৫,০০,০০০
মোট আয় ১,০০,০০,০০০

 

*অনগদায়িত মূলধনি আয় করযোগ্য নয়

 

 

 

ক। করদায় পরিগণনা
প্রথম ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ০%
পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ৫% ৫,০০০
পরবর্তী ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ১০% ৪০,০০০
পরবর্তী ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ১৫% ৭৫,০০০
পরবর্তী ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ২০% ১,০০,০০০
পরবর্তী ৬,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ২৫% ১,৫০,০০০
নিয়মিত উৎসের আয় ২৫ লক্ষ টাকার উপর করদায় ৩,৭০,০০০
জমি হস্তান্তর হতে মূলধনি আয় ৭৫ লক্ষ টাকার উপর করদায় (চূড়ান্ত) ৪,০০,০০০
মোট করদায়                 ৭,৭০,০০০
খ। করদাতার কর রেয়াত নির্ধারণ  
(অ) ০.০৩ × ২৫,০০,০০০ ৭৫,০০০  
(আ) ০.১৫ × ৫০,০০,০০০ ৭,৫০,০০০  
(ই) ১০,০০,০০০    
মোট রেয়াতের পরিমাণ হচ্ছে (অ), (আ) ও (ই) – এ তিনটির মধ্যে যেটি কম = ৭৫,০০০
প্রদেয় করদায় ৬,৯৫,০০০
গ। অগ্রিম ও উৎসে পরিশোধিত কর    
১। অগ্রিম কর ২,৪০,০০০  
২। উৎসে পরিশোধিত কর ৪,০০,০০০  
অগ্রিম ও উৎসে পরিশোধিত মোট কর ৬,৪০,০০০
রিটার্নের সাথে ১৭৩ ধারা অনুযায়ী প্রদেয়

 করের পরিমাণ

৫৫,০০০

 

 

 আর্থিক পরিসম্পদ হইতে আয়

    আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ৬২-৬৫ অনুযায়ী আর্থিক পরিসম্পদ হইতে আয় পরিগণনা করতে হবে।

কোনো ব্যক্তির নিম্নবর্ণিত আয় “আর্থিক পরিসম্পদ হইতে আয়” খাতের অধীন পরিগণিত হবে, যথা:-

(ক)     সরকারি বা সরকার কর্তৃক অনুমোদিত সিকিউরিটিজের সুদ, মুনাফা বা বাট্টা;

(খ)      স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বা কোম্পানি কর্তৃক ইস্যুকৃত ডিবেঞ্চার বা অন্য কোনো প্রকারের সিকিউরিটিজের সুদ, মুনাফা বা বাট্টা;

(গ)      নিম্নবর্ণিত উৎস হতে প্রাপ্য সুদ বা মুনাফা, যথা: –

(অ)     কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রক্ষিত আমানত, তাহা যে নামেই অভিহিত হউক না কেন;

(আ)    কোনো আর্থিক পরিসম্পদ, পণ্য বা স্কিম;

(ঘ)      লভ্যাংশ।

 

তবে, আর্থিক পরিসম্পদ হস্তান্তর হতে অর্জিত মূলধনি আয় “আর্থিক পরিসম্পদ হইতে আয়” হিসাবে পরিগণিত হবে না।

সিকিউরিটিজ অর্থে অন্তর্ভুক্ত হবে-

(ক) সরকার কর্তৃক ইস্যুকৃত ট্রেজারি বিল, বন্ড, সঞ্চয়পত্র, ঋণপত্র (debenture), সুকুক বা শরীয়াহ ভিত্তিক ইস্যুকৃত সিকিউরিটি বা অনুরূপ দলিল;

(খ) কোনো কোম্পানি বা আইনগত সত্তা বা ইস্যুয়ার কর্তৃক ইস্যুকৃত শেয়ার বা স্টক, বন্ধক বা চার্জ বা হাইপোথিকেশনের মাধ্যমে ইস্যুকৃত দলিল, বন্ড, ডিবেঞ্চার, ডেরিভেটিভস, মিউচুয়াল ফান্ড বা অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডসহ যেকোনো যৌথ বিনিয়োগ স্কিমের ইউনিট, সুকুক বা শরীয়াহ ভিত্তিক ইস্যুকৃত অনুরূপ দলিল, এবং পূর্বোল্লিখিত দলিল গ্রহণার্থে ক্রয়ের অধিকার বা ক্ষমতাপত্র (warrant):

তবে, কোনো মুদ্রা বা নোট, ড্রাফট, চেক, বিনিময়পত্র, ব্যাংকের স্বীকৃতিপত্র, ব্যবসায়িক দেনাদারদের নিকট প্রাপ্য অর্থ (trade receivables) বা ব্যবসায়িক পাওনাদারদেরকে প্রদেয় অর্থ (trade payables) এর অন্তর্ভুক্ত হবে না।

 

 

 

 

আর্থিক পরিসম্পদ হইতে আয় পরিগণনার ক্ষেত্রে অনুমোদনযোগ্য খরচ

“আর্থিক পরিসম্পদ হইতে আয়” খাতের আয় পরিগণনার ক্ষেত্রে, নিম্নবর্ণিত খরচসমূহ অনুমোদিত হবে, যথা: –

(ক)     ব্যাংক বা ফাইন্যান্স কোম্পানি কর্তৃক করদাতাকে সুদ বা মুনাফা প্রদানের বিপরীতে আয়কর ব্যতীত কর্তনকৃত অর্থ;

(খ)      কেবল “আর্থিক পরিসম্পদ হইতে আয়” অর্জনের উদ্দেশ্যে ঋণকৃত অর্থের উপর পরিশোধিত সুদ;

(গ)      কেবল সংশ্লিষ্ট আয় অর্জনের উদ্দেশ্যে, দফা (ক) বা (খ)তে উল্লিখিত ব্যয় ব্যতীত, নির্বাহকৃত অন্য কোনো ব্যয়।

 

 অন্যান্য উৎস হইতে আয়

আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ৬৬-৬৯ অনুযায়ী অন্যান্য উৎস হইতে আয় পরিগণনা করতে হবে। কোনো করদাতার নিম্নবর্ণিত আয়সমূহ অন্যান্য উৎস হইতে আয় খাতের অধীন শ্রেণিভুক্ত ও পরিগণিত হবে, যথা: –

(ক) রয়্যালটি, লাইসেন্স ফি, কারিগরি জ্ঞানের জন্য ফি এবং স্পর্শাতীত সম্পত্তির ব্যবহারের অধিকার প্রদানের মাধ্যমে অর্জিত আয়;

(খ) সরকার প্রদত্ত নগদ ভর্তুকি;

(গ) খনিজ মজুদ ও হাইড্রোকার্বন (mineral deposits and hydrocarbons)  এবং সুনাম (goodwill) ব্যতীত অন্য কোনো পরিসম্পদ, যা প্রাকৃতিক বা কোনো ব্যক্তির স্বীয় সৃষ্ট, হস্তান্তর হতে অর্জিত আয়;

(ঘ) যেকোনো দান, অনুদান বা উপহার, তা যে নামেই অভিহিত হউক না কেন;

(ঙ) ধারা ৩০ এ বর্ণিত অন্য কোনো খাতের অধীন শ্রেণিভুক্ত হয় নাই এইরূপ কোনো উৎস হইতে আয়।

 

অন্যান্য উৎস হইতে আয়ভুক্ত কোনো উৎস হতে উৎসে কর কর্তন/আদায় করা হয়ে থাকলে করদাতা মোট (gross) প্রাপ্তি আয় হিসেবে প্রদর্শন করবেন, নীট (net) প্রাপ্তি নয়।

 

ধরা যাক, মিজ্‌ মন যমুনা বক্তৃতা দিয়ে উৎস কর ১০,০০০ টাকা কেটে রাখার পর ৯০,০০০ টাকার একটি চেক পেয়েছেন। তাহলে বক্তৃতা বাবদ মিজ্‌ মন যমুনার অন্যান্য সূত্রের আয় হবে (৯০,০০০ + ১০,০০০) = ১,০০,০০০ টাকা। উৎসে কেটে রাখা আয়কর তার জন্য অগ্রিম কর পরিশোধ হিসেবে বিবেচিত হবে যা তিনি আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন/দাবী করতে পারবেন। এরূপ অগ্রিম কর পরিশোধ মোট আয়ের উপর নিরূপিত করদায়ের বিপরীতে ক্রেডিট পাওয়া যাবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি করদাতার আয়ের সকল উৎসের জন্য নিরূপিত মোট আয়ের উপর করদায়ের পরিমাণ ৫৫,০০০ টাকা হয় তাহলে করদাতাকে ১০,০০০ টাকা বাদে অবশিষ্ট ৫৫,০০০ – ১০,০০০ = ৪৫,০০০ টাকা আয়কর পরিশোধ করতে হবে।

 

 

 

 

ফার্ম বা ব্যক্তিসংঘের আয়ের অংশ

করদাতা কোনো অংশীদারি ফার্মের অংশীদার বা ব্যক্তি-সংঘের সদস্য হলে ফার্ম বা ব্যক্তি-সংঘ থেকে পাওয়া তার আয়ের অংশ মোট আয়ে অন্তর্ভুক্ত হবে। তবে আয়ের এ অংশের জন্য গড়করণের মাধ্যমে কর রেয়াত পাবেন।

 

ব্যক্তিসংঘের কোনো সদস্য বা ফার্মের কোনো অংশীদারের মোট আয়ে ব্যক্তিসংঘ বা, ক্ষেত্রমত, ফার্ম হতে উদ্ভূত করারোপিত শেয়ার আয় অন্তর্ভুক্ত হলে উক্ত শেয়ার আয়ের উপর গড় হারে হিসাবকৃত কর পরিশোধযোগ্য হবে না।

 

নিম্নবর্ণিত সূত্র অনুসারে গড় হারে কর হিসাব করতে হবে, যথা:-

ট=   ক × (খ/গ), যেইক্ষেত্রে-

ট=   গড় হারে কর,

ক=  মোট আয়ের (ফার্ম বা ব্যক্তিসংঘের কর পরবর্তী মুনাফা হইতে প্রাপ্ত শেয়ার আয়সহ) উপর হিসাবকৃত কর,

খ=   ফার্ম বা ব্যক্তিসংঘের কর পরবর্তী মুনাফা হইতে প্রাপ্ত শেয়ার আয়,

গ=   ফার্ম বা ব্যক্তিসংঘের কর পরবর্তী মুনাফা হইতে প্রাপ্ত শেয়ার আয়সহ মোট আয়।

উদাহরণ-

ধরা যাক, জনাব তোফায়েল আহমেদ একটি ফার্মের ১/৪ অংশের অংশীদার। ৩০ জুন ২০২৪ তারিখে সমাপ্ত আয়বর্ষে ঐ ফার্ম মুনাফা করেছে ৬,০০,০০০ টাকা এবং কর পরিশোধ করেছে ২০,০০০ টাকা। অর্থাৎ ঐ অংশীদারি ফার্মের কর-পরবর্তী মুনাফা ৫,৮০,০০০ টাকা। জনাব আহমেদ ফার্মের অংশীদার হিসেবে মুনাফার হিস্যা পেয়েছেন ১,৪৫,০০০ টাকা। এছাড়া, সংশ্লিষ্ট আয়বর্ষে তাঁর গৃহ-সম্পত্তির নীট আয় ছিল ৩,৮৫,০০০ টাকা।

 

২০২৪-২০২৫ করবর্ষে জনাব আহমেদের মোট আয় হবে (৩,৮৫,০০০ + ১,৪৫,০০০) = ৫,৩০,০০০ টাকা। মোট আয়ের উপর আয়করের পরিমাণ নিম্নরূপ:

 

প্রথম ৩,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত ‘শূন্য’ হার                                শূন্য

পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত ৫%                                   ৫,০০০

অবশিষ্ট ৮০,০০০ টাকার উপর ১০%                                     ৮,০০০

মোট আয়ের উপর আয়কর                                           ১৩,০০০

ফার্মের অংশীদারি আয়ের জন্য করদাতা যে কর রেয়াত (ফার্মের করারোপিত আয়ের আনুপাতিক অংক) পাবেন এবং রেয়াত পাওয়ার পরে তাকে যে পরিমাণ কর পরিশোধ করতে হবে তা নিম্নরূপ:

ট=           ক × (খ/গ)

ট=           ১৩,০০০ × (১,৪৫,০০০/৫,৩০,০০০)

ট=           ৩,৫৫৭

করদাতার নীট প্রদেয় করের পরিমাণ: ১৩,০০০ – ৩,৫৫৭ টাকা = ৯,৪৪৩ টাকা।

 

 স্বামী/ স্ত্রী বা অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের আয় (আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ৩১())

করদাতার স্বামী/স্ত্রী বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদের নামে যদি পৃথকভাবে আয়কর নথি না থাকে তাহলে আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ৩১(১) অনুযায়ী তাদের আয় করদাতার আয়ের সাথে একত্রে প্রদর্শন করতে হবে।

কোনো ব্যক্তির স্বামী বা স্ত্রী বা অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের আয় উক্ত ব্যক্তির মোট আয়ের অন্তর্ভুক্ত হবে, যদি-

(অ)     উক্ত স্বামী বা স্ত্রী বা অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান তাহার উপর নির্ভরশীল হন;

(আ)    এরূপ আয়ের উপর উক্ত ব্যক্তির যুক্তিসঙ্গত নিয়ন্ত্রণ থাকে; বা

(ই)      তিনি এরূপ একীভূতকরণে ইচ্ছুক হন:

তবে, উক্ত স্বামী বা স্ত্রী বা অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের পৃথক কর নির্ধারণ করা হলে এই বিধান প্রযোজ্য হবে না।

14 views